১৫২৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মুঘল আফগান দ্বন্দ্ব বর্ণনা করাে ।

অনাস পাস ইতিহাস honours pass general history questions answers প্রশ্নোত্তর ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মুঘল আফগান দ্বন্দ্ব বর্ণনা করাে 1526 khristabd theke 1556 khristabd porjonto mughol afgan dondo bornona koro


উত্তর : মুঘল - আফগান প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভারতবর্ষের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় । বস্তুত মুঘল - আফগান প্রতিদ্বন্দ্বিতার তিনটি পর্যায় । প্রথম পর্যায় শুরু হয় পাঞ্জাবের শাসনকর্তা দৌলত খাঁ ও ইব্রাহিম লােদীর পিতৃব্য আলম খান বাবরকে ভারত আক্রমণের আমন্ত্রণ জানায় এবং শেষ


হয় পানিপথের প্রথম যুদ্ধ ও ঘর্ঘরার আফগানদের পরাজয় । দ্বিতীয় পর্যায়ের সূচনা হুমায়নের সিংহাসন আরােহন থেকে ( ১৫৩০ ) শেষ হয় কনৌজের যুদ্ধ ( ১৫৪০ ) শেরশাহের হাতে হুমায়নের পরাজয় । এরপর ১৫ বছরের ( ১৫৪০ - ১৫৫৫ খ্রিস্টাব্দ ) বিরতি । এই সময় শেরশাহ , তার পুত্র ও আত্মীয়রা সিংহাসন দখল করেছিলেন । তৃতীয় ও শেষ পর্যায় আরম্ভ হয় হুমায়ুন কর্তৃক সিংহাসন পুনরুদ্ধারের চেষ্টা থেকে শেষ হয় পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধে বৈরাম খাঁর হাতে হিমুর পরাজয় ও মৃত্যুতে ( ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে )। 


ষােড়শ শতকের শুরুতে লােদী বংশের সবচেয়ে সফল সুলতান সিকান্দার শাহ ( ১৪৮৯ - ১৫১৭ খ্রিঃ ) এর পুত্র ইব্রাহিম লােদী সিংহাসনে বসলে আফগান স্বাতন্ত্র্যবােধ মাথা চারা দিয়ে ওঠে । রাজ্যের প্রভাবশালী আফগান নেতারা , বিহারে জায়গীরদার শের খান শুর এবং পাঞ্জাব শাসনকর্তা দৌলত খাঁ ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে । কাবুল থেকে বাবর ভারতবর্ষের এই রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখেন । বাবর মনে করতেন , তৈমুর লঙ এর উত্তরাধিকারী হিসাবে ভারতের উপর তার অধিকার আছে । বাবরের সামনে সুবর্ণ সুযােগ এল যখন পাঞ্জাব শাসনকর্তা দৌলত খাঁ এবং আলম বাবরকে ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আহ্বান জানায় । সম্ভবত রানা সিংহ বাবরকেও ভারত আক্রমণের আমন্ত্রণ জানান । 

 
কুরুক্ষেত্রের কাছে পানিপথের প্রথম যুদ্ধ শুরু হয় ( ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে )। এই যুদ্ধে ইব্রাহিম লােদীর পক্ষে ছিল ১ লক্ষ সৈন্য এবং সহস্রাধিক হস্তি । অন্যদিকে বাবর এনেছিলেন ১২০০০ অশ্বারােহী এবং গােলন্দাজ বাহিনী । রুমী প্রথায় বাবর যুদ্ধ করেন । এই প্রথায় সামনাসামনি যুদ্ধ না করে মুঘল সৈন্য এগিয়ে গিয়ে পিছন থেকে আফগানদের ঘিরে ফেলে । পরে গােলন্দাজ বাহিনী সামনে থেকে আক্রমণ চালায় এবং আফগানরা ছত্রভঙ্গ হয় । বাবর মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন । ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দে খানােয়ার প্রান্তরে রাজপুতরা পরাজিত হয় ।স্থাপিত হয় মুঘল সাম্রাজ্যের স্থায়িত্ব । 


বিহারে ইব্রাহিম লােদীর ভাই মহম্মদ লােদীর নেতৃত্বে আফগানরা পুনরায় ঐক্যবদ্ধ হয় । বাংলার শাসনকর্তা নসরৎ শাহ (খাঁ ) এদের সাহায্যে এগিয়ে আসে । পাটনার উত্তরে ঘাগড়া বা ঘর্ঘরায় ১৫২৯ খ্রিস্টাব্দে মুঘলবাহিনী আফগানদের পরাজিত করে । এইভাবে পানিপথ, খানােয়ার , চান্দেরী এবং ঘর্ঘরার যুদ্ধে বাহিনীদের সম্পূর্ণ পর্যুদস্ত করে বাবর ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করে আফগানদের অবসান ঘটান । কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে , মুঘল সাম্রাজ্যের মূল তখনও সুদৃঢ় হয়নি । এই কাজে হাত দেবার পূর্বেই বাববের মৃত্যু ঘটে( ১৫৩০ খ্রিস্টাব্দে ) । 

 

তথাপি আফগানরা লােদী সাম্রাজ্যের পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন দেখতাে । ঘর্ঘরার যুদ্ধের পর বিক্ষুব্ধ আফগানরা বিহারে সর্দার শের খানের নেতৃত্ব লাভ করে । হুমায়ন চুনার দুর্গ অবরােধ অসমাপ্ত রেখে আগ্রা ফিরে গেলে ( ১৫৩১ খ্রিস্টাব্দ )শের খান চুনার দখল করেন । হুমায়ন পুনরায় চুনার জয় করে গেীড়ে ফিরে যান এবং গৌড় জয় করে আগ্রায় ফিরবার পথে বক্সারের কাছে চৌসায় শেরশাহের সেনাবাহিনীর সম্মুখীন হয়ে পড়েন এবং পরাজিত হন । হুমায়ন কোনভাবে পালিয়ে যান কিন্তু শের খান ছাড়বার পাত্র ছিলেন না । কনৌজের বিল্লগ্রামের যুদ্ধে আবার ( ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দ ) হুমায়ন পরাজিত হন । হুমায়ন সিন্ধু প্রদেশে পালিয়ে যান এবং শের শাহ সিংহাসন দখল করেন এবং মুঘল আফগান দ্বন্দ্বের দ্বিতীয় পর্যায় আরম্ভ হয় । 



১৫৪০ - ১৫৫৪ খ্রিস্টাব্দ : এই সময়টুকুর মধ্যে হুমায়ন কাবুলে শক্তি সঞ্চয় করতে সমর্থ হন এবং ভারতে শূরদের প্রতি নজর দেন । ১৫৫৪ খ্রিস্টাব্দে লাহােরে সিকান্দার শূরকে আক্রমণ করেন এবং মুঘল আফগান প্রতিদ্বন্দ্বিতার তৃতীয় পর্যায় শুরু হয় । লাহােরে জয়লাভ করে মুঘল সৈন্য এগিয়ে গিয়ে সির হিন্দে আফগান বাহিনীকে পরাজিত করে । হুমায়ন দিল্লি, আগ্রা পুনরুদ্ধার করেন কিন্তু অল্পকালের মধ্যেই হুমায়ন মারা যান । ( জানুয়ারি , ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দ ) হুমায়নের নাবালক পুত্র আকবরকে তখন লাহােরে বৈরাম খাঁর অভিভাবকত্বে বাদশাহ ঘােষণা করা হয় । দিল্লির শাসনকর্তা তখন মুঘল প্রতিনিধি তারদি বেগ । আদিল শূরের নেতৃত্বে হিন্দু প্রতিনিধি হিমু তারদি বেগকে পরাজিত করে দিল্লি অধিকার করে নেন এবং নিজেকে দিল্লির শাসনকর্তা বলে ঘােষণা করেন । পাঞ্জাব থেকে বৈরাম খাঁ দ্বিতীয় পানিপথের যুদ্ধে ( ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে ) হিমুকে পরাজিত করে ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন । 


 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন