বাহমনী রাজ্যের ইতিহাসে মামুদ গাওয়ানের অবদান আলােচনা করাে ।


অনাস পাস ইতিহাস honours pass general history questions answers প্রশ্নোত্তর বাহমনী রাজ্যের ইতিহাসে মামুদ গাওয়ানের অবদান আলােচনা করাে bahomoni rajyar itihase mamud gaoyaner abodan alochona koro

উত্তর : সূচনা : মামুদ গাওয়ান ১৪৬৪ - ১৪৮১ খ্রিস্টাব্দে এই সময় মামুদ গাওয়ান নামে জনৈক ‘পরদেশী’ রাজ্যের সর্বেসর্বা হয়ে ওঠেন । তিনি কেবলমাত্র বাহমনী রাজ্যকে আশু ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষাই করেন নি , সব দিক থেকে রাজ্যটিকে শক্তিশালী করে গড়ে তােলেন । সৎ ও নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারী গাওয়ানের বিচক্ষণতা , দূরদর্শিতা, কূট কৌশল , সমর কুশলতা ও প্রশাসনিক দক্ষতায় বাহমনী রাজ্যে উন্নতির চরম শিখরে আরােহন করে । 


ক্ষমতালাভ : ১৪৬১ খ্রিস্টাব্দে সুলতান হুমায়ুন শাহের মৃত্যু ঘটলে তার নাবালক পুত্র নিজাম শাহ সিংহসনে বসেন । এ সময় প্রকৃত শাসনক্ষমতা ছিল রাজামাতা মকদুমা জাহানা -র হাতে । তিনি খাজা জাহান এবং মামুদ গাওয়ান নামক দুইজন ওমরাহের সাহায্যে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন । নিজাম শাহের মৃত্যুর পর ( ১৪৬৩ খ্রিস্টাব্দে ) সিংহাসনে বসেন ছয় বৎসর বয়স্ক বালক তৃতীয় মহম্মদ শাহ । ১৪৬৫ খ্রিস্টাব্দে খাজা জাহানের মৃত্যু হয় এবং রাজমাতা সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান । এর ফলে মামুদ গাওয়ানের উপর রাজ্যের সকল দায়িত্ব অর্পিত হয় । তিনি ‘উজির’ পদে নিযুক্ত হন এবং আমৃত্যু তিনি এই পদে বহাল থেকে কার্যত বাহমনী রাজ্যের সর্বেসর্বা হয়ে ওঠেন । 

রাজ্যজয় : তিনি পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলির বহু অংশ জয় করে বাহমনী রাজ্যের সম্প্রসারণ ঘটান । তিনি বিজয়নগর রাজ্য আক্রমণ করে দাভোল ও গােয়া সহ পশ্চিম উপকূলের বিশাল এলাকা ও পূর্ব উপকূলের রাজমুন্দ্রি ও কোন্দাভির দখল করেন । পশ্চিম উপকূলের বন্দরগুলি হস্তচ্যুত হওয়ায় বিজয়নগর রাজ্যের প্রবল ক্ষতি হয় । অপরদিকে ইরাক , ইরান , প্রভৃতি দেশের সঙ্গে বামনী রাজ্যের সামুদ্রিক বাণিজ্য প্রসারিত হয় । এছাড়া পশ্চিম এশীয় বাণিজ্যের ফলে অন্তর্দেশীয় বানিজ্য ও উৎপাদন বৃদ্ধি পায় । এই সময় বাহমনী সেনাদল বিজয়নগরের অভ্যন্তরে কাঞ্চি বা কাঞ্চিভরম পর্যন্ত অগ্রসর হয়ে যথেচ্ছভাবে নগরটি লুণ্ঠন করে । তিনি সঙ্গমেশ্বর রাজ্য আক্রমণ করে খালনা দুর্গটি দখল করেন । তিনি উড়িষ্যার বিরুদ্ধে অভিযান পাঠিয়ে জয়যুক্ত হন এবং যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ হিসাবে তিনি উড়িষ্যা রাজ্যের কাছ থেকে বহু ধনরত্ন ও হাতি আদায় করেন । সুলতান আহম্মদ শাহের আমল থেকে খলজি শাসিত মালবের সঙ্গে বাহমনী রাজ্যের বিবাদ চলছিল । মামুদ গাওয়ান মালবের বিরুদ্ধে একাধিক যুদ্ধে সফল হন । 


প্রশাসনিক সংস্কার : সুশাসক মামুদ গাওয়ান প্রশাসনে নানাবিধ সংস্কার প্রবর্তন করেন । তিনি  প্রশাসনে দুর্নীতি বন্ধ করেন এবং সরকারী কর্মচারীদের উৎকোচ গ্রহণ নিষিদ্ধ করেন । তিনি বিচার বিভাগ ও রাজস্ব বিভাগেও সংস্কার প্রবর্তন করেন । তিনি রাজ্যের সকল জমি জরিপ করে ভােগ দখলকারীদের তালিকা প্রস্তুত করেন । ভূমি সংস্কারের ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিল উল্লেখযােগ্য । তিনি কর্মচারীদের দায়িত্ব ও বেতন নির্ধারণ করে দেন । পূর্বে বাহমনী রাজ্যে চারটি তরফ বা প্রদেশ ছিল । তিনি তরফ এর সংখ্যা করেন আটটি । তিনি প্রয়ােজনে হিন্দুদের উচ্চ রাজপদে নিয়ােগ করতেন ।এ সময় ‘দক্ষিণী’ ও ‘পরদেশী ’ মুসলিমদের বিবাদ তীব্র আকার ধারণ করলে তিনি উভয় পক্ষের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার নীতি গ্রহণ করেন । 


বিদ্যার পৃষ্ঠপােষক : তিনি সৎ ও নির্মল চরিত্রের মানুষ ছিলেন । তাঁর জীবন ছিল অনাড়ম্বর । তিনি বিদ্যা ও বিদ্বানের পৃষ্ঠপােষক ছিলেন । তিনি নিজে গণিত ও চিকিৎসা শাস্ত্রের উৎসাহী ছাত্র ছিলেন । তিনি বিদরে একটি বিশাল মাদ্রাসা নির্মাণ করেন ।প্রায় এক হাজার ছাত্র ও শিক্ষক এখানে অধ্যয়ন ও অধ্যাপনা করতেন । এখানে পড়াশােনা , আহার ও বসবাস করার জন্য কোনাে খরচ দিতে হতাে না । দেশ বিদেশের পণ্ডিতরা এখানে সমবেত হতেন । 


মামুদ গাওয়ানের প্রাণদণ্ড : মামুদ গাওয়ানের প্রতিপত্তি বৃদ্ধিতে অনেকে ঈর্ষান্বিত হয়ে ওঠেন ।   মামুদ গাওয়ান বিরােধী ‘দক্ষিণী’গােষ্ঠী একটি জাল দলিল তৈরি করে তার বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার  অভিযােগ এনে সুলতান তৃতীয় মহম্মদ শাহের কাছে পেশ করে । কোনাে প্রকার অনুসন্ধান না করেই সুলতান তার মৃত্যুদণ্ড দেন । ঐতিহাসিক টেলর বলেন যে , তাঁর মৃত্যুতে বামনী রাজ্যের সকল সংহতি ও ঐক্য বিনষ্ট হয় । 




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন