ভারতে রাজপুত নীতির প্রকৃত উদ্দেশ্য কী ছিল ?

অনাস পাস ইতিহাস honours pass general history questions answers প্রশ্নোত্তর ভারতে রাজপুত নীতির প্রকৃত উদ্দেশ্য কী ছিল bharote rajput nitir prokrito uddeshya ki chilo


উত্তর : ভারতবর্ষের ইতিহাসে ( রাজনৈতিক ) যােদ্ধা শক্তি হিসাবে রাজপুত জাতির ঐতিহ্য খুবই প্রাচীন । খানুয়ার যুদ্ধে রাজপুত বাহিনী বাবরের কাছে পরাজিত হলে রাজপুতদের মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়েছিল, রাজপুত শক্তি সংঘ ভেঙেছিল এবং ভারতে মুঘল কর্তৃত্বের পথ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল । 


পরবর্তী সম্রাট হুমায়ুনকে রাজপুতদের বিষয়ে মাথা ঘামাতে হয়নি । খানুয়ার যুদ্ধের ধাক্কা সামলে রাজপুতরাও তখনও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি । কিন্তু অন্যান্য বাধার সামনে রাজপুত জাতির সহযােগিতা অর্জন করে মুঘল কর্তৃত্বকে সুদৃঢ় করার মতাে দূরদৃষ্টি হুমায়নের ছিল না । তাই আফগানদের কাছ থেকে বিরাট বিরােধীতা আসা সত্ত্বেও হুমায়ন রাজপুত সম্পর্কে নিশূহ হয়ে যায় । 


পরবর্তী মুঘল সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে মুঘল রাজপুত সম্পর্ক একটি সুনির্দিষ্ট চরিত্র পেয়েছিল । বুদ্ধিদীপ্ত,স্বার্থবােধ,চিন্তাপ্রসূত দূরদৃষ্টি এবং রাজনৈতিক সচেতনতা আকবরকে রাজপুত নীতি সম্পর্কে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল । শাসনকালের শুরুতে শাহ আব্দুল মালিকের ঔদ্ধত্য , শাহ মনসুর খাঁর বিশ্বাসঘাতকতা , বৈরাম খাঁর বিদ্রোহ , শাহম অনাখার সংকীর্ণতা ,উজবেক বিদ্রোহ প্রভৃতি আকবরকে যথেষ্ট চিন্তান্বিত করেছিল । আত্মীয় , কর্মচারীদের ক্রমাগত বিরােধীতার পরিস্থিতি আকবরকে ভারতবর্ষের রাজনৈতিক দিক দিয়ে জনগােষ্ঠীর সাহায্য নেওয়ার কথা ভাবতে হয় । আকবরের সময় আফগান বিরােধিতা উল্লেখযােগ্য । 
 

রাজপুতদের সম্পর্কে আকবর পূর্বসূরীদের অপেক্ষা দূরদর্শিতার পরিচয় দেন । রাজপুতদের সাহায্য নিয়ে তিনি মুঘল , উজবেক , আফগান , পার্সী ,অভিজাত এবং অন্যান্য উদ্ধত রাজকর্মচারীদের প্রভাব খর্ব করতে চেষ্টা করেন । 


রাজপুতদের সাথে মৈত্রী বন্ধন দৃঢ় করার জন্য তার প্রধান অস্ত্র ছিল বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন । ১৫৬২ সালে আজমীর যাত্রার সময় আকবর অম্বরের রাজপুত রাজা বিহারী মল্লের আনুগত্য ও মিত্রতা লাভ করেন । তিনি বিহারী মল্পের কন্যা মানবাঈকে বিবাহ করেন । বিকানীর ও জয়পুরের দুই রাজকন্যাকে তিনি বিবাহ করেন । মানবাঈ - এর গর্ভজাত সেলিমের সঙ্গে উদয় সিংহের কন্যা যােধাবাঈ - এর বিবাহ দেন । এই সম্পর্কের ফলে তিনি বিহারী মল্ল, টোডরমল , মানসিংহ প্রমুখ রাজপুত বীরের যে সেবা লাভ করেন ,তা আকবরের সামরিক , অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা শক্ত করে ।


রাজপুত রাজ্য মারােয়াড় দখল করার ফলে যােধপুরের মধ্য দিয়ে গুজরাটের সাথে যােগাযােগ সহজতর হয়েছিল । এর ফলে অল্প ব্যায়ে মুঘল বাহিনী গুজরাট অভিযান শুরু করতে পেরেছিল । অধিকাংশ রাজপুত রাজ্যের সাথে মুঘলদের মিত্রতা থাকার ফলে মুঘল বাহিনী দেশের অন্যান্য অংশে সর্বশক্তিসহ অভিযান চালাতে সক্ষম হয়েছিল । 


মনে রাখতে হবে , সকল ক্ষেত্রেই আকবর বিনা যুদ্ধে তাঁর রাজপুত নীতি রূপায়ন করতে সক্ষম হননি । ১৫৬২ খ্রিস্টাব্দে মালব , ১৫৬৮ খ্রিস্টাব্দে রনথােম্ভর , ১৫৭০ খ্রিস্টাব্দে মারােয়াড় বিকানীর এবং জয়সলমীর রাজ্যের বিরুদ্ধে তাকে অস্ত্র ধারণ করতে হয় । মেবার দীর্ঘকাল আকবরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়েছিলেন এবং অবশেষে মেবারের রাজধানী চিতােরের পতন হয় । অন্যান্য অঞ্চল যথা – প্রতাপগড় , দুগারপুর ক্রমে তার অধীনে আসে ।আকবর এই সকল রাজপুতদের বিরােধিতার কথা ভুলে অনেককেই প্রশাসকের পদে নিযুক্ত করেছিলেন । ঐতিহাসিক টড বলেছিলেন “আকবর ছিলেন রাজপুতানার প্রথম সফল বিজেতা , যিনি সােনার শিকল দিয়ে বাঁধতে পেরেছিলেন ।” 

 
ভারতের শক্তিশালী জনগােষ্ঠী মােঘলের পক্ষে থাকার ফলে মােঘল প্রশাসন ও সামরিক বিভাগ কিছুটা ভারমুক্ত মনে অন্যান্য বিচ্ছিন্নতাবাদী ও প্রতিক্রিয়াশীল বিষয়ে অধিক সময় ও শক্তি ব্যায় করতে সক্ষম হন । রাজপুত অশ্বারােহী বাহিনী মােঘল বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ফলে মুঘল বাহিনী শক্তিশালী হয়ে ওঠে । 


আকবরের আনুগত্যে রাজপুত রাজারা স্বাধীনভাবে নিজ নিজ রাজ্যের শাসন পরিচালনার সুযােগ পান । বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে তাদের নিযুক্ত রাখা হয়েছিল ।যেমন , অম্বরের ভগবান দাসকে লাহােরের যুগ্ম শাসক , মানসিংহকে প্রথমে কাবুলের ও পরে বাংলা, বিহারের শাসনকর্তা নিযুক্ত করা হয়েছিল । অন্যান্য রাজপুতদের আগ্রা, গুজরাট , আজমীর প্রদেশে শাসক নিযুক্ত করা হয় । বংশগত জায়গীর ছাড়াও সাম্রাজ্যের দূর দূরান্তে জায়গীর পাওয়ার ফলে রাজপুত রানাদের অনেকেই বহু অর্থ সঞ্চয় করতে পেরেছিলেন । 


সর্বোপরি সম্রাটের প্রিয়পাত্র ও আত্মীয়দের সূত্রে রাজপুতগণ সম্মান ও প্রতিপত্তির অধিকারী হন । ঔরঙ্গজেব তার শাসনকালের প্রথম দিকে রাজপুতদের যে সৌহার্দ্য ও সহযােগিতা পেয়েছিলেন তা আকবরের জন্য । 


 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন