দিল্লির প্রথম সুলতানী শাসনকে ‘দাসবংশ’ নামে চিহ্নিত করা কতদূর যুক্তিসঙ্গত ?

অনাস পাস ইতিহাস honours pass general history questions answers প্রশ্নোত্তর দিল্লির প্রথম সুলতানী শাসনকে দাসবংশ নামে চিহ্নিত করা কতদূর যুক্তিসঙ্গত delhir prothom sultani sashonke dasbongsho name chinhito kora kotodur juktisongoto


উত্তর : কুতুবউদ্দিনের দ্বারা স্থাপিত বংশের অধিকাংশ শক্তিশালী সম্রাটরাই প্রথম জীবনে ছিলেন ক্রীতদাস । যেমন মহম্মদ ঘুরীর ক্রীতদাস ছিলেন কুতুবউদ্দিন আইবক , আবার ইলতুৎমিস , বলবনও ছিলেন ক্রীতদাস । এমফিলস্টোন , স্মিথ প্রমুখ ঐতিহাসিকগণ এদের বংশকে দাসবংশ বা ‘Slave Dynasty’ বলে উল্লেখ করেছেন । 

কিন্তু আধুনিক ঐতিহাসিকরা এদের দাসবংশ বলে অভিহিত করাকে ঐতিহাসিক দিক থেকে অযৌক্তিক বলে মনে করে । ডঃ ঈশ্বরী প্রসাদের মতে , “A slave king according & to Islamik law would be a contradiction terms” কারণ তিনটি রাজবংশ এই সময়ে রাজত্ব করেছিল । পৃথক পৃথক ব্যক্তি এই তিন রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা । তাছাড়া এরা জীবনের প্রারম্ভিককালে ক্রীতদাস হিসাবে জীবন আরম্ভ করলেও প্রত্যেকেই নিজ নিজ ক্ষেত্রেই প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন এবং যখন তারা সিংহাসনে আরােহণ করেছিলেন তখন তারা স্বাধীন নাগরিক ছিলেন । ইলতুৎমিস ও বলবন দুজনেই সিংহাসন আরােহণের পূর্বেই প্রভু কর্তৃক দাসত্ব থেকে মুক্তি পান । কুতুবউদ্দিন আইবক সম্ভবত সিংহাসনে আরােহণের পরে দাসত্ব থেকে মুক্তিলাভ করেন । 

 
আবার অধ্যাপক সতীশচন্দ্র , নিজামি প্রমুখ ঐতিহাসিকগণ সবদিক থেকে বিচার করে এদেরকে মামেলুক বলে অভিহিত করেছেন । মামেলুক শব্দটি আরবি শব্দ । যার অর্থ ‘স্বীয়’ অধিকার ভুক্ত । গৃহকর্মে বা অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনে নিযুক্ত সাধারণ ক্রীতদাসদের সঙ্গে পার্থক্য করার জন্যই প্রধানত সেনাবাহিনীতে নিযুক্ত তুর্কী ক্রীতদাস অর্থে শব্দটি ব্যবহার হত ।



অনেকে আবার এদেরকে ইলবারী বা আলবারী তুর্কী বলে উল্লেখ করেছেন । কুতুবউদ্দিন আইবক ‘ইলবারী’ গােষ্ঠীভুক্ত তুর্কী ছিলেন না । ইলতুৎমিসের সময় থেকে ১২৯০ খ্রিঃ পর্যন্ত ইলবারি - র তুর্কি সুলতানরা দিল্লীতে ক্ষমতাসীন ছিলেন । সুতরাং ১২০৬ - ১২৯০ কালপর্বের সুলতানদের ‘ইলবারি তুর্কি’ বলা সঠিক নয় । 

তবে এই গােষ্ঠীর সকল সুলতান ইলবারীর বংশভূত / গােষ্ঠীভুক্ত ছিলেন না । সুতরাং যৌথভাবে এই গােষ্ঠীর সকলকেই রাজগােষ্ঠী বা রাজবৃত্ত বলাই যুক্তিযুক্ত । তাছাড়া কুতুবউদ্দিন , ইলতুৎমিস এবং বলবন ছাড়া এই গােষ্ঠীর অন্য কোনাে সুলতান ক্রীতদাস ছিলেন না । আবার উক্ত তিনজন একই বংশের ব্যক্তি ছিলেন না । তাই এই তিনজনের প্রতিষ্ঠিত বংশকে যথাক্রমে কুতুবী , ইলসামসীতুৎমিস এবং বলবনী বংশ নামে অভিহিত করা অযৌক্তিক নয় । কিন্তু উক্ত তিনজন সুলতান পরস্পর বৈবাহিক সূত্রে গােষ্ঠীভুক্ত ছিলেন । যেমন দাস সুলতান কুতুবউদ্দিনের জামাতা ছিলেন ক্রীতদাস ইলতুৎমিস । ক্রীতদাস বলবন ছিলেন ইলতুৎমিসের জামাতা । তাই অনেক ঐতিহাসিক তিনজনকে একত্রিত করে যৌথভাবে দাসবংশ বা দাস রাজগােষ্ঠীর আখ্যা দিতে চান । ডঃ মাখনলাল রায়চৌধুরীর মতাে ঐতিহাসিকও দিল্লীর প্রথম সুলতানী শাসনকে দাসবংশ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন । 


 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন