মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে বাবরের কৃতিত্ব আলােচনা করাে ।

অনাস পাস ইতিহাস honours pass general history questions answers প্রশ্নোত্তর মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে বাবরের কৃতিত্ব আলােচনা করাে mughol samrajyar protisthata hisabe baborer krititto alochona koro


উত্তর : মুঘল সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বাবর না আকবর এ বিষয়ে পণ্ডিত মহলে বিতর্কের অবকাশ আছে । শ্রীরামশরণ শর্মা, জন রিচার্ডস, রামপ্রসাদ ত্রিপাঠী প্রমুখ ঐতিহাসিক মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব বাবরকে দিতে চান । আবার টডের মতাে বহু ঐতিহাসিক আকবরকেই মুঘল সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলেছেন । এই দুই সম্রাটের মধ্যে বাবরের কৃতিত্বের কথা আলােচনা করবাে । 


বাবরের ভারত আক্রমণের প্রাক্কালে দিল্লির সিংহাসনে ছিলেন দুর্বল সুলতান ইব্রাহিম লােদী । তার রাজ্যে ছিল কতকগুলি স্বাধীন করদ রাজ্য ,জায়গীর ও প্রদেশের সমষ্টিবিশেষ । অর্থাৎ  এদেশে কোনাে সার্বভৌম শক্তির অস্তিত্ব ছিল না ।ঐতিহাসিকদের ভাষায় - “ লােদী সাম্রাজ্যের কোনাে সংহতি ছিল না । ” ঈশ্বরী প্রসাদের কথায় , —“ ষােড়শ শতাব্দীর প্রারম্ভে ভারত ছিল কতকগুলাে রাজ্যের সমষ্টিমাত্র এবং কোনাে বিদেশী শক্তি ভারত জয়ে সংকল্প করে থাকলে বাধা দেবার শক্তি ভারতের ছিল না ।” 


এই পরিস্থিতির সুযােগ নিয়ে ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে পানিপথের প্রান্তরে ইব্রাহিম লােদীর সাথে যুদ্ধে জয়লাভ করে বাবর দিল্লি ও আগ্রা হস্তগত করেন । ঈশ্বরী প্রসাদ লিখেছেন “পানিপথের যুদ্ধে জয়ের ফলে দিল্লির সুলতানী সাম্রাজ্যে বাবরের করতলগত হল । লােদী বংশের ধ্বংস হলে হিন্দুস্থানের সার্বভৌমত্ব চাখদাই তুর্কীদের হস্তগত হয় । কিন্তু পানিপথের প্রথম যুদ্ধ জয়ের ফলেই সমগ্র ভারতবর্ষের উপর বাবরের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি । এই জয় ভারতে মুঘল সাম্রাজ্য স্থাপনে প্রথম পদক্ষেপ ছিল মাত্র ।”


 
বাবরের স্বপক্ষে বলা যায় যে , তিনি সামরিক অর্থে ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা । বাবর যদি পানিপথের যুদ্ধে আফগান ও খানােয়ার যুদ্ধে রাজপুত শক্তিকে চুর্ণ না করতেন তাহলে আকবরের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার সুযােগ ঘটত না । বাবর যদি মুঘল শক্তিকে ভারতে প্রতিষ্ঠা না দিতেন তাহলে এশিয়ায় সাম্রাজ্য স্থাপন করতে গিয়ে তাতার জাতির সাথে অবিরত যুদ্ধে মুঘলশক্তি শেষ হয়ে যেত । বাবর উত্তর ভারতের রাজ্যগুলি দখল করে এদেশে একটি সাম্রাজ্যিক পরিকাঠামাে তৈরি করেছিলেন এবং দিল্লিকে রাজধানীর মর্যাদা দিয়েছিলেন । এছাড়া বাবর ‘বাদশাহ’ উপাধি ধারণ করে রাজার সার্বভৌম কর্তৃত্ব স্থাপন করায় সুলতানী যুগের মতাে অভিজাতরা আর দাবি করতে সাহস করেন নি । এজন্য শ্রী রামশরণ শর্মা বলেন যে , - “বারর একটি রাজবংশ ও রাষ্ট্রীয় আদর্শের প্রবর্তন করেন ।” বাবর হুমায়নের জন্য রেখে গিয়েছিলেন মধ্য এশিয়া ,কাবুল , পাঞ্জাব থেকে বিহার পর্যন্ত বিস্তৃত এক সাম্রাজ্য । বাবর তার উত্তরাধিকারীদের জন্য সমরবিদ্যার মতাে কৌশল , বড়াে ধর্মসহিষ্ণুতার নীতি , সিংহাসনে রাজার দৈব অধিকার নীতির দ্বারা খলিফাতন্ত্রকে অগ্রাধিকার করার সাহস ইত্যাদি রেখে গিয়েছিলেন । তাই জন রিচার্ড , রামপ্রসাদ ত্রিপাঠী প্রমুখদের মতে , বাবর প্রকৃতপক্ষে মুঘল যুগের সূত্রপাত করেন । 

 
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন