বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের উত্থান অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

Clg history questions answers কলেজ ইতিহাস বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের উত্থান অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর bouddho o joino dhormer utthan


প্রশ্ন । বৌদ্ধ ও জৈনধর্মের উৎপত্তির কারণ কি ? 

উত্তর : বৈদিক যুগের সরল এবং অনাড়ম্বর হিন্দুধর্ম পরবর্তীকালে নীরস যাগযজ্ঞের এবং পশুবলি ইত্যাদি নিষ্ঠুর অনুষ্ঠানে পরিণত হয় । পুরােপুরি শ্রেণীর ক্ষমতা ধীরে ধীরে সমাজে বৃদ্ধি পেতে থাকে । এই আদর্শচ্যুত ধর্ম, উচ্চবর্ণের সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভুত্ব এবং জাতিভেদের কঠোরতার বিরুদ্ধে চিন্তাশীল মানুষের মনে ক্রমেই একটি ঘৃণার ভাব দেখা দেয় । প্রচলিত ধর্মীয় মতবাদের বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদ জানা এবং উপনিষদের ওপর নির্ভর করে অহিংসার বাণীর প্রচার করতে শুরু করেন । ফলে ধর্মসংস্কারের আন্দোলন গড়ে ওঠে এবং বৌদ্ধ ও জৈনধর্ম আত্মপ্রকাশ করে । সেজন্য বৌদ্ধ ও জৈন ধর্ম প্রতিবাদী ধর্ম নামেও পরিচিত । 


প্রশ্ন । গৌতমবুদ্ধ কোন বছরে জন্মগ্রহণ করেন ? 

উত্তর : আনুমানিক ৬২৩ অথবা ৫৬৭ অথবা ৫৬৩ খ্রিস্টাব্দে গৌতমবুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেন । গৌতম বুদ্ধের পিতার নাম শুদ্ধোধন এবং মাতার নাম মায়া । 


প্রশ্ন । গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান কোথায় ? 

উত্তর : নেপালের তরাই অঞ্চলের কপিলাবস্তুর শাক্যবংশে গৌতম বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেন । তিনি শাক্যসিংহ এবং শাক্যমুনি নামেও পরিচিত । 


প্রশ্ন । কোথায় গৌতমবুদ্ধ তার ধর্মমত সর্বপ্রথম প্রচার করেন ? 

উত্তর : বেনারসের নিকটবর্তী সারনাথের মৃগদাবে গৌতম বুদ্ধ সর্বপ্রথম তার নতুন ধর্মমত প্রচার করেন । 


প্রশ্ন । গৌতমবুদ্ধের জীবনের কোন ঘটনাকে ধর্মচক্র প্রবর্তন বলা হয় ? 

উত্তর : বােধি বা দিব্য জ্ঞান লাভের পর গৌতম বুদ্ধ সারনাথে এসে উপস্থিত হন এবং সেখানে পঞভিক্ষু নামে পরিচিত শিষ্যদের উপদেশ - দান করেন ? এই ঘটনা বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসে ‘ধর্মচক্র প্রবর্তন’ নামে খ্যাত । 

প্রশ্ন । চারটি আর্যসত্য কি ?

উত্তর : পরম জ্ঞানলাভের পর বুদ্ধদেব সারনাথে প্রথম যে মহান তত্ত্ব প্রচার করেন তা আর্যসত্য নামে পরিচিত । তাদের সংখ্যা চারটি বলে তারা চারটি আর্যসত্য নামে পরিচিত । চারটি আর্যসত্য হল : ( ক ) জগৎ দুঃখময় , ( খ ) তৃষ্ণা বা আকাঙ্ক্ষা দুঃখের মূল কারণ ; ( গ ) কামনা ও বাসনার উচ্ছেদের মধ্য দিয়ে তৃষ্ণার অবসান ঘটে এবং ( ঘ ) দুঃখ নিরােধের একমাত্র উপায় হল অষ্টাঙ্গিক মার্গ অনুসরণ । 


প্রশ্ন । ‘ত্রিপিটক’ বলতে কি বুঝায় ? 

উত্তর : বুদ্ধদেবের মৃত্যুর পর তাঁর ধর্মমত ও উপদেশ বাণীকে লিপিবদ্ধ করার উদ্দেশ্যে রাজগৃহে এক বৌদ্ধ- সঙ্গীতি বা সম্মেলন আহ্বান করা হয়েছিল । এখানে তাঁর বাণীগুলাে লিপিবদ্ধ করে তিনটি পিটকে বিভক্ত করা হয় : তথা — ‘সূত্তপিটক , বিনয় পিটক এবং অভিধর্ম পিটক । এগুলােতে যথাক্রমে বুদ্ধের উপদেশাবলী , বৌদ্ধ ভিক্ষু ভিক্ষুনীদের আচার - আচরণ ও বৌদ্ধ দর্শন পালিভাষায় লিপিবদ্ধ আছে । এই তিনটি পিটককে ত্রিপিটক বলা হয় । ত্রিপিটক পালিভাষায় রচিত ।

প্রশ্ন । কপিলাবস্তু এবং কুশিনগর কিভাবে বুদ্ধদেবের জীবনের সঙ্গে যুক্ত ? 

উত্তর : বুদ্ধদেব কপিলাবস্তুতে জন্মগ্রহণ করেন এবং কুশিনগরে তাঁর মৃত্যু হয় । 


প্রশ্ন । বৌদ্ধসঙ্গীতি কি ? কোথায় কোথায় এগুলাে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ?  

উত্তর : বুদ্ধদেবের বাণী ও বৌদ্ধদর্শনের বিভিন্ন দিক নিয়ে যে আলােচনা সভা হত তা বৌদ্ধসঙ্গীতি নামে অভিহিত হয় । মােট চারটি বৌদ্ধ সঙ্গীতি অনুষ্ঠিত হয়েছিল । প্রথম বৌদ্ধ সঙ্গীতি রাজগৃহে , দ্বিতীয় বৌদ্ধ সঙ্গীতি বৈশালীতে , তৃতীয় বৌদ্ধসঙ্গীতি সম্রাট অশােকের আমলে পাটলিপুত্রে এবং সম্রাট কনিষ্কের আমলে চতুর্থ বা শেষ বৌদ্ধ সঙ্গীতি কাশ্মীরে ( মতান্তরে জলন্ধরে ) অনুষ্ঠিত হয়েছিল । 

প্রশ্ন । জৈনধর্মের প্রবক্তা কে ? জৈনধর্মের মূল কথা কি ?

উত্তর : জৈনধর্মের মূল প্রবর্তক ছিলেন পার্শ্বনাথ ? তিনিই এই ধর্মের মৌলিক নীতিগুলাে স্থির করে যান । এগুলাে হল —অহিংসা , সত্যবাদিতা , চুরি করা থেকে বিরত থাকা এবং অনাসক্তি । মহাবীর এই চারটি নীতির সঙ্গে ব্ৰত্মচর্যনীতি যােগ করেন ।

প্রশ্ন । জৈনধর্মের প্রবর্তক মহবীর কোথায় ‘পরিনির্বাণ’ লাভ করেন ? 

উত্তর : আনুমানিক ৫২৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বিহারের পাটনা জেলার অন্তর্গত পাবা নামক স্থানে মহাবীর পরিনির্বাণ লাভ করেন । 


প্রশ্ন । ত্রিরত্ন কি ? 

উত্তর : জৈনধর্মের মূললক্ষ্য হল মােক্ষ বা মুক্তিলাভ । জৈনধর্মমত অনুসারে জ্ঞান ও ক্রিয়ার মাধ্যমে এই মুক্তি অর্জন করা যায় । তাই জ্ঞান, কর্ম ( ক্রিয়া ) ও মুক্তি এই তিনটি গুণকে জৈনরা ত্রিরত্ন বলে । 


প্রশ্ন । আজীবিক কাদের বলা হয় ? 

উত্তর : গৌতমবুদ্ধ ও মহাবীরের সময় সাময়িক গােশালমং খলিপুত্ত আজীবিক নামে একটি ধর্ম সম্প্রদায় স্থাপন করেন । সমন্ন-ফল -সুত্ত এবং ভগবতী সূত্রে এই সম্প্রদায়ের মতাদর্শ জানা যায় । আজীবিকগণ মানুষের কর্মক্ষমতা অপেক্ষা অদৃষ্টবাদে বিশ্বাসী ছিল । সম্রাট অশােকের আমলে আজীবিকদের প্রভাব খুব বৃদ্ধি পায় এবং সম্রাট অশােক গয়ার নিকট বরাবর পাহাড়ে তাদের তিনটি গুহা দান করেন । 



প্রশ্ন । বৌদ্ধধর্ম ও জৈনধর্মের মধ্যে পার্থক্য কি ? 

উত্তর : জৈন ও বৌদ্ধ উভয় ধর্মমতই অহিংসা নীতির পুরােপুরি প্রতিষ্ঠিত । জৈনরা অহিংসা নীতি প্রয়ােগের ক্ষেত্রে পুরােপুরি ভাবে চরমপন্থী । বৌদ্ধধর্মে একমাত্র জীবজগৎ সম্পর্কে অহিংসা নীতি পালনের কথা বলা হয়েছে । গৌতম বুদ্ধ ছিলেন মধ্যমপন্থা গ্রহণের পক্ষপাতী । তিনি ছিলেন আতিশয্য বর্জনের চরম সমর্থক । অন্যদিকে মহাবীর বর্ধমান তপস্যা ও কঠোর কৃচ্ছসাধনের পক্ষপাতী ছিলেন । সম্বােধি ও নির্বাণের মধ্য দিয়ে বৃদ্ধিবৃত্তি বিকাশের ওপর বৌদ্ধধর্ম গুরুত্ব আরােপ করে । অপরদিকে জৈনধর্মমতে একমাত্র জিতেন্দ্রিয়তা ও নিরাশক্তির দ্বারাই সিদ্ধিলাভ সম্ভব বলে ঘােষণা করা হয় ।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন