ব্রাহ্মসমাজ আন্দোলনের সামাজিক গুরুত্ব কী ?

Clg history questions answers কলেজ প্রশ্নোত্তর ব্রাহ্মসমাজ আন্দোলনের সামাজিক গুরুত্ব কী brammosomaj andoloner samajik gurutto ki


উত্তর : উনিশ শতকে ভারতে ধর্ম ও সমাজ সংস্কারক আন্দোলনের অন্যতম উল্লেখযােগ্য প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি ছিল ব্রাহ্মসমাজ । উপনিষদকে ভিত্তি করে রামমােহন ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে ‘ব্রাহ্মসমাজ’ নামে একটি একেশ্বরবাদী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন । এই ধর্মসংঘের উদ্দেশ্য ছিল পৌত্তলিকতাবাদ বর্জন করে নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা করা । ব্রাহ্ম সমাজের প্রতিষ্ঠার মূলে দুটি বিশেষ উদ্দেশ্য দেখা যায় । একদিকে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারকদের প্রকট হিন্দুবিদ্বেষ ভারতীয় ধর্ম ও সমাজ জীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল । অন্যদিকে রক্ষণশীল হিন্দু সমাজের কুসংস্কার ও কুপ্রথাগুলিকে দূর করতে না পারলে ধর্ম ও সমাজের অস্তিত্বরক্ষা করা সম্ভব ছিল না । এই অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ।

১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে রামােহনের মৃত্যুর পর ব্রাহ্ম আন্দোলন কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়ে । তারপর ব্রাহ্মসমাজের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ( ১৮১৭-১৯০৫ খ্রিঃ ) । দেবেন্দ্রনাথ ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে  ‘তত্ত্ববােধিনী সভা’ স্থাপন করেন । এই প্রতিষ্ঠান দলমত নির্বিশেষে সকল বাঙালি বুদ্ধিজীবীর মিলনকেন্দ্রে পরিণত হয় । এর প্রদান উদ্দেশ্য ছিল সংস্কারমুক্ত ধর্ম আলােচনা । কেশবচন্দ্র সেনের নেতৃত্বে ব্রাহ্মসমাজে আরও পরিবর্তন সাধিত হয় । তিনি ব্রাহ্ম আন্দোলনকে সামাজিক আদর্শ ও ধর্মবিশ্বাসের ওপর প্রতিষ্ঠিত করেন ।

কেশবচন্দ্র পৌত্তলিকতা ও জাতিভেদ প্রথার বিরােধী ছিলেন এবং শেষােক্ত বিষয় নিয়ে আদি ব্রাহ্মসমাজ -এর সঙ্গে মতভেদ ঘটে এবং তরুণ ব্রাহ্মগণ কেশবের নেতৃত্বে ভারতীয় ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠিত করেন । কেশবচন্দ্রের পরিচালনায় ব্রাহ্মমসমাজ শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ছিল না , সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রেও বিশেষ তৎপর হয়েছিল । যেমন স্ত্রীজাতির উন্নতি, শ্রমিকশ্রেণির শিক্ষা ব্যবস্থা, মাদকদ্রব্য বর্জন প্রভৃতি ব্যাপারে ব্রাহ্মসমাজ জনমত গঠনে সচেষ্ট হয় । দুঃখের বিষয় কেশবচন্দ্র - এর সঙ্গে শিবনাথ শাস্ত্রী , আনন্দমােহন বসু প্রমুখ নবীন ব্রাহ্মনেতাদের বিরােধ সৃষ্টি হলে তারা ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেন । যাহােক ব্রাহ্ম আন্দোলনে তিনি নতুন উদ্দীপনা ও চেতনার সঞ্চার করেন ও ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণ করে ব্রাহ্মধর্ম প্রচারে আত্মনিয়ােগ করেন ।

অভ্যন্তরীণ বিভেদের ফলে ব্রাহ্মসমাজের সাংগঠনিক শক্তি ক্রমশ শিথিল হয়ে পড়ে । কিন্তু দুর্বলতা সত্ত্বেও ব্রাহ্ম আন্দোলন কোনাে নিছক ধর্ম-আন্দোলন ছিল না । মূলত ব্রাহ্ম আন্দোলনের প্রভাবে সরকার তিন আইন প্রবর্তনের ( ১৮৭২ খ্রিঃ ) মাধ্যমে বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করেছিলেন । শ্রমজীবী মানুষের উন্নতিকল্পেও ব্ৰহ্ম নেতাদের উদ্যোগ বিভিন্ন পদক্ষেপ গৃহীত হয় । ভারতে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের পথ প্রস্তুতে ব্রাহ্মসমাজের বিশিষ্ট ভূমিকা ছিল ।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন