পেশােয়াদের সঙ্গে ইংরেজদের সম্পর্ক আলােচনা কর ।

Clg history questions answers কলেজ প্রশ্নোত্তর পেশােয়াদের সঙ্গে ইংরেজদের সম্পর্ক আলােচনা কর peshoyarder songhe ingrejder somporko alochona koro

উত্তর : মুঘল সাম্রাজ্যের ধ্বংসস্তুপের ওপর যে সকল আঞ্চলিক রাজ্য গড়ে উঠেছিল তাদের মধ্যে সামরিক উল্লেখযােগ্য ছিল মারাঠার পেশােয়া শক্তি । যা ইংরেজদের প্রবলভাবে রাজ্য বিস্তারে বিঘ্ন ঘটাতে শুরু করেছিল । উদ্ভবের সময় থেকেই মারাঠা রাষ্ট্রের পেশােয়াদের এই অভ্যুত্থান কোনাে আকস্মিক ঘটনা নয় । মারাঠাদের শাসনতন্ত্রের ছত্রপতি সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী হলেও মন্ত্রী পরিষদ যথেষ্ট মর্যাদার অধিকারী ছিল এবং এই মন্ত্রী পরিষদে অন্যতম সদস্য ছিলেন পেশােয়া বা প্রধানমন্ত্রী । ড . সেন মন্তব্য করেন হােলি -রােমান সাম্রাজ্যের সম্রাটের পক্ষে রােমে অভিষিক্ত হওয়া যেমন আবশ্যিক ছিল তেমনই ভারতবর্ষে ইংরেজ শক্তি বিস্তারের পথে পেশােয়াতন্ত্রের অবিষেকের আবশ্যিকতাও উল্লেখযােগ্য । 

       
মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ প্রশাকক ও প্রভাবশালী অভিজাত জুলফিকার খার পরামর্শে মারাঠা পেশােয়া পুত্র শাহুকে মুক্তি দেন । সাময়িকভাবে বিরােধের মীমাংসা করেন । কিন্তু ইংরেজ শক্তি কোনােভাবে মারাঠা গণের সঙ্গে মিত্রতা বা সৌভ্রাতৃত্ব বজায় রাখতে ইচ্ছুক ছিলেন না । বালাজী বিশ্বনাথ ছিলেন যথার্থ বিচক্ষণ । কূটনীতি এবং বাস্তবমুখী পরিবর্তন ঘটিয়ে তিনি উদ্ভূত পরিস্থতিকে সফলভাবেই মােকাবিলা করেন । উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও বিবদমান মারাঠা সর্দারদের সন্তুষ্ট করবার জন্য তিনি তাদের আর্থিক ক্ষমতা ও সুযােগ সুবিধা বৃদ্ধি করেন । তিনি চাইতেন যেকোনাে মূল্যে মারাঠা শক্তিকে একত্রিত করতে এবং ইংরেজ শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে । কিন্তু মারাঠা ঐতিহাসিক সরদেশাই সমালােচনা করে বলেন - “এই চুক্তি বালাজী বিশ্বনাথের অদূরদর্শিতার পরিচায়ক ।” আবার স্যার রিচার্ড টেমপল ইংরেজদের সঙ্গে বালাজীর হওয়া চুক্তিকে দূরদর্শিতা ও গভীর রাজনৈতিক পাণ্ডিত্যের পরিচায়ক বলেছেন । 

পেশােয়াতন্ত্রের অভ্যুত্থান মারাঠাদের শক্তি বৃদ্ধি করলেও ইংরেজদের সঙ্গে অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির ফলে কিছুটা পেশােয়া পিছিয়ে পড়েন । ১৫ হাজার অতিরিক্ত সৈন্যের নেতৃত্ব পেয়ে মারাঠা শক্তি ইংরেজ বিরােধিতা করলেও হিন্দু পাদ পাদশাহী আদর্শ রক্ষা করা সম্ভব হয়নি । ওয়ার্নার চুক্তি ও পরবর্তীকালে পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের পর নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ভবিষ্যত । স্বয়ং সরদেশাই মন্তব্য করেছিলেন , বিজয়ী আফগান নয় , কিংবা বিজিত মারাঠা নয় - এই যুদ্ধের জয়মাল্য পরিয়েছিলেন ইংরেজ কোম্পানির ভাগ্য লক্ষ্মীর গলায় । এই যুদ্ধের পর সর্বাত্মক বিপর্যয় কাটিয়ে পেশােয়াতন্ত্রের পক্ষে ভারতের রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের পথে সুনিশ্চিত বড় বাধা পেশােয়াতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে ইংরেজগণ । সেই সম্ভাবনাকে সুদৃঢ় করেছিল । এর পরবর্তী পর্যায়ে পলাশীর যুদ্ধে জয়লাভ করে ইংরেজ শক্তি ভারতের রাজনৈতিক মাটিতে যে বীজ রােপন করেছিল , পেশােয়াতন্ত্রের সঙ্গে পানিপথের যুদ্ধে পেশােয়াশক্তির পরাজয় সেই বীজে বারি সিঞ্চন করেছিল বলে মন্তব্য করেন স্যার যদুনাথ সরকার । 


পেশােয়াতন্ত্রের অভ্যুত্থান মারাঠাদের শক্তি বৃদ্ধি করলেও তার প্রভাব ছিল সাময়িক এবং পরিণতিতে ক্ষতিকারক । রাজতন্ত্রের দুর্বলতা ইংরেজ সংঘর্ষে মারাঠা রাষ্ট্রসংঘে বিচ্ছিন্নতাবাদের জন্ম দিয়েছিল । শক্তিশালী মারাঠা পেশােয়ার কর্তৃত্ব অস্বীকার করে ইংরেজ বিরােধিতার সময়ে কিছু জায়গীরদার স্বাধীনতাকামী হয়ে ওঠে । বহু মারাঠা সর্দার নিজেদের পেশােয়ার সমতুল্য মনে করে কেন্দ্রিয় শক্তির ভিতটিকে ভেঙে দেন । সর্দারদের পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাও উচ্চাকাঙ্ক্ষা শেষ পর্যন্ত মারাঠাদের পতন ডেকে আনে ।

 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন