পলাশীর যুদ্ধের গুরুত্ব আলােচনা কর ।

Clg history questions answers কলেজ প্রশ্নোত্তর পলাশীর যুদ্ধের গুরুত্ব আলােচনা কর polashir judher gurutto alochona koro


উত্তর : ইংরেজ ঐতিহাসিক এস. সি. হিল মনে করেন সিরাজের অহমিকা ও লােভ তাকে যুদ্ধে প্ররােচিত করেছিল ‘New Cambridge History of India’ — গ্রন্থে আমরা এই কথা জানতে পারি । সিরাজ -ই পলাশীর যুদ্ধের জন্য দায়ী ছিলেন বলে মনে করেন P. e . Robert , ড . বিজেন গুপ্ত তা মানেনি । আয়ােজন যাই হােক না কেন এই যুদ্ধ যে প্রহসন ও কামানের খেলামাত্র তা অনেক ঐতিহাসিক স্বীকার করেন । ম্যালেসনের মতে , পলাশীর যুদ্ধকে চূড়ান্ত যুদ্ধ মনে হলেও কখনাে বড় যুদ্ধ হিসাবে গণ্য করা যায় না । ভারতের ইতিহাসে এই যুদ্ধের গুরুত্ব অপরিসীম যা নিন্মে আলােচনা করা হল - 

প্রথমত । বাঙালি নবীনচন্দ্র সেনের ভাষায় পলাশির যুদ্ধটির অন্ধকারময় রাশির সূচনা করে চুক্তি অনুযায়ী ইংরেজরা মিরজাফরকে সিংহাসনে বসান । ফলে ইস্য ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা , বিহার ও উড়িষ্যা অবধি বাণিজ্যের সুযােগ পায় । 

দ্বিতীয়ত । পলাশির যুদ্ধ এই কারণেই চূড়ান্ত যুদ্ধ ছিল কারণ এই যুদ্ধের পর থেকে ইংরেজরা প্রথমে বাংলায় এবং পরে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করে । 
তৃতীয়ত । সিরাজ - উদ - দৌল্লার স্থলে মিরজাফর বাংলার সিংহাসন লাভ করেন । পূর্ববর্তী গােপন চুক্তি অনুসারে নবাব হলেও সমস্ত ক্ষমতা কোম্পানির হাতে চলে গিয়েছিল । ঐহিহাসিক স্পর্সিভাল সিংহাসনের পশ্চাতের শক্তি এবং নবারের সঙ্গে কোম্পানির সম্পর্কে ‘ছায়া ও কায়া’ বলেছেন ।   

চতুর্থত । যুদ্ধে জয়লাভের পুরস্কার স্বরূপ কোম্পানির কর্মচারীরা প্রত্যেকেই প্রচুর অর্থ পান । ক্লাইভ একাই তিন লক্ষ টাকা পুরস্কারস্বরূপ পেয়েছিলেন এবং রাজকোষ থেকে এই অর্থ প্রদান করা হতাে । এক পরিসংখ্যানে দেখানাে হয়েছে বাংলার থেকে ১,৭৩,৯৬,৭৫১ টাকা ইংল্যান্ডে চলে গিয়েছিল । পলাশির যুদ্ধের পর নতুন নবাব ও নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিলেন । 

পঞ্চমত । অর্থ ছাড়াও চব্বিশ পরগণার ভূ-খণ্ডটি ইংরেজরা লাভ করেছিলেন । কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের কথায় ‘বণিকের মানদণ্ড দেখা দিল রাজদণ্ড রূপে’ । টমসনের মতে শেতাঙ্গ ইংরেজদের প্রাপ্ত লাভের এটাই বৃহত্তর ঘটনা । 

ষষ্ঠত । ইংরেজদের অবাধ ও নিরঙ্কুশ বাণিজ্য বৃদ্ধিতে নতুন দিগন্তে উপনীত হল পলাশির যুদ্ধের পর । বাংলার রাজস্ব ব্যবস্থায় যেমন ইংরেজদের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত হয় । তেমনি এদেশে ব্যবসা বাণিজ্য বাজার সবই ইংরেজদের অধীনে চলে আসে । দেশীয় বাণিজ্য, শিল্প ভেঙে পড়ে । শিল্পী ও বণিকদের শােচনীয় অবস্থার সৃষ্টি হয় ।

সপ্তমত । ঐতিহাসিক পি . জি মার্শালের মতে পলাশীর যুদ্ধের পর সম্পদ নির্গমনের এক নির্লজ্জ অধ্যায় শুরু হয় । এই সময় থেকে এক বিশাল অঙ্কের সম্পদ ইংল্যান্ডে চলে গিয়েছিল যে বাংলার চিরাচরিত অর্থ সামাজিক কাঠামােটি ভেঙে পড়ে । ড . বিপানচন্দ্রের মতে বাংলার অর্থনীতি শূন্য হয়ে গিয়েছিল । এই যুদ্ধকে অনেকে পলাশির লুণ্ঠন বলেছেন । 

অষ্টমত । পলাশির যুদ্ধের সুদূর প্রসারী ফল হল দাক্ষিণাত্যে ফরাসিদের বিরুদ্ধে ইংরেজদের শক্তি সঞ্চয় । তৃতীয় কর্ণাটকের যুদ্ধে ফরাসিদের পরাজয়ের মূলে পলাশির যুদ্ধের প্রভাব ছিল । ড . রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেন , পলাশির যুদ্ধ ভারতে ব্রিটিশদের ভাগ্য নির্ধারণ করে দিয়েছিল । 
সবশেষে আমরা ঐতিহাসিক তারাচাঁদ রায়ের ভাষায় বলতে পারি যে — বাংলার পলাশির যুদ্ধ বেশ কিছু ঘটনার সূত্রপাত ঘটায় যা শেষ পর্যন্ত বাংলার মুখমুণ্ডলাইট বদলে দেয় । ভারতের অর্থনীতিতে এবং সংস্কার যা কয়েক শতাব্দী স্থায়ী ছিল তা পরিবর্তিত হয় । 



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন