উত্তর : ১৭৬১ খ্রিঃ পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে পরাজিত মারাঠাগণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল সত্য কিন্তু মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই নবীন পেশােয়া মাধব রাও - এর নেতৃত্বে মারাঠাশক্তি পুনসঞ্জীবিত হয়ে ওঠে । ফলে উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে মারাঠা শক্তি এক অদম্য শক্তিরূপে প্রতিষ্ঠিত হয় । এই অবস্থায় ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে উদীয়মান ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্ব অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে । এই দ্বন্দ্বের প্রথম প্রতিফলন ছিল ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ ।
প্রথম ইঙ্গ -মারাঠা যুদ্ধের কারণ : পেশােয়া মাধবরাও - এর নেতৃত্বে মারাঠা শক্তি ক্রমশ পরাক্রমশালী হয়ে উঠলে ইংরেজ কোম্পানি ভারতের গভর্নর হেস্টিংস আশঙ্কিত হয়ে পড়ে । অবশেষে রঘুনাথ রাও পেশােয়া পদে দখল করতে ব্যর্থ হন ইংরেজ কোম্পানি বােম্বাই কাউন্সিলের সাহায্য প্রার্থনা করেন । ওয়ারেন হেস্টিংস মারাঠাদের সঙ্গে কোনােরূপ দ্বন্দ্বে প্রবৃত্ত হওয়ার ইচ্ছা পােষণ না করলেও কোম্পানি কাউন্সিল সাম্রাজ্য বিস্তারের লােভে এই সুযােগ ছাড়েননি এবং রঘুনাথ রাও এর সঙ্গে ১৭৭৫ খ্রিঃ সুরাটের সন্ধি স্বাক্ষর করেন । বেসিন , সলসৌ এবং ভারচু পাওয়ার প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে কাউন্সিল রঘুনাথকে ব্রিটিশ সৈন্যর সাহায্য দেয় । এই সৈন্যবাহিনী আরাস -এর যুদ্ধে মারাঠাগণকে পরাজিত করে সলসেট দখল করে নেয় । এভাবে শুরু হয় প্রথম ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ ।
পুরন্দরের সন্ধি : কিন্তু কলকাতা কাউন্সিল এই যুদ্ধ অনুমােদন না করাতে পর বছরই মারাঠাদের সঙ্গে ইংরেজগগণ পুরন্দরের সন্ধি স্বাক্ষর করে রঘুনাথের পক্ষ ত্যাগ করে । অবশেষে বিলাতের ডাইরেক্টর সভা কর্তৃক সুরাটের সন্ধি পুনরায় অনুমােদিত হওয়াতে বােম্বাই কাউন্সিল পুনরায় উৎসাহ ভরে মারাঠাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন । কিন্তু মারাঠাদের দ্বারা পরাজিত হওয়ার ফলে অবশেষে কলকাতা কাউন্সিল তাদের সমস্ত শক্তি নিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন । কয়েকটি জয় পরাজয়ের পর ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে উভয় পক্ষের মধ্যে সলবাই - এর সন্ধি স্বাক্ষরিত হয় ।
উপসংহার : উপরােক্ত আলােচনা থেকে দেখা যায় যে , প্রথম ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধের মূল কারণ ছিল মারাঠাদের অন্তদ্বন্দ্ব এবং এই সুযােগে মারাঠা রাজনীতিতে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হস্তক্ষেপ ।