সুলতানী যুগ অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

Clg history questions answers কলেজ ইতিহাস সুলতানী যুগ অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর sultani jug


প্রশ্ন । মধ্যযুগের ভারতের দিল্লী সুলতানী আমলের ইতিহাসের উপাদানের জন্য প্রয়ােজনীয় কয়েকটি গ্রন্থের নাম লিখ । 

উত্তর : মধ্যযুগের ভারতের সুলতানী আমলের ইতিহাসের উপাদান হিসাবে মীর -মােহম্মদ মাসুম রচিত তারিখ -ই -সিন্ধু , হাসান নিজামীর তাজ - উল -মাসির , মিনহাজ -উল -সিরাজের তবাক - ই- নাসিরি , জিয়া- উদ -দিন , বরানির তারিখ -ই -ফিরােজশাহী , সিরাজ -ই- আফিকের , আমীর খসরুর খজাইন -উল -ফুতুহ প্রভৃতির নাম খুবই উল্লেখযােগ্য । 


প্রশ্ন । আলবেরুনী সম্বন্ধে কি জান ? 

উত্তর : গজনীর অধিপতি সুলতান মামুদের রাজদরবারের সর্বশ্রেষ্ঠ রত্ন , পন্ডিত আলবেরুনী মধ্য যুগের এশিয়ার অন্যতম প্রধান পন্ডিত ও মনীষী ছিলেন । সুলতান মামুদের ভারত অভিযানের সময় তিনি ভারতে আগমন করেন এবং ভারতের শিল্প , দর্শন , সমাজজীবনের প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট হন এবং ভারতীয় বিষয় বস্তু অবলম্বন করে কিতাব -উল -হিন্দ নামে এক খানা গ্রন্থ রচনা করেন । তাঁর রচিত গ্রন্থ থেকে সমসাময়িক ভারতীয় ইতিহাস দর্শন বিজ্ঞান রচনার অনেক উপাদান সংগ্রহ করা যায় । আলবেরুনী ছিলেন মুক্ত মনের এক মহাপন্ডিত   ও ভারততত্ত্ববিদ । ১০৪৮ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যু হয় । 


প্রশ্ন । গজনীর সুলতান মামুদ কতবার ভারত আক্রমণ করেন ? তিনি ‘বাত শিকান’ উপাধি কেন গ্রহণ করেন ? 

উত্তর : গজনীর সুলতান মামুদ ১০০০ থেকে ১০২৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মােট সতেরবার ভারত আক্রমণ করেন । এই সব অভিযানে ধনসম্পদ লুণ্ঠনের সঙ্গে সঙ্গে বহু হিন্দু মন্দির ও দেব - দেবীর মূর্তি তিনি ধ্বংস করেন এবং মূর্তি পূজা বিরােধী আদর্শ স্থাপন করেন । সেজন্য তিনি ‘বাতশিকান’ বা মূর্তি ধ্বংসকারী উপাধি গ্রহণ করেন । ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি সৌরাষ্ট্রের বিখ্যাত সােমনাথের মন্দির লুণ্ঠন করেন । 


প্রশ্ন । কোন সময়ে আরবগণ সিন্ধু বিজয় করেন ? তাদের কোন ভারতীয় রাজা বাধা দেন ?

উত্তর : ৭১২ খ্রিস্টাব্দে আরবগণ মােহম্মদ -বিন -কাশিমের নেতৃত্বে সিন্ধুদেশ জয় করেন । সিন্ধু দেশের রাজা দাহির আরবদের বাধা দেন । যুদ্ধে রাজ দাহির পরাজিত ও নিহত হন । 


প্রশ্ন । তরাইনের প্রথম যুদ্ধ ১১৯১ খ্রিস্টাব্দ সম্বন্ধে কি জান ? 

উত্তর : গজনীর শাসনকর্তা শিহাব -উদ -দিন মােহম্মদ ঘুরী পাঞ্জাবের মুলতান অধিকার করার পর দিল্লীর চৌহানবংশীয় রাজপুতরাজ পৃথ্বীরাজের রাজ্যের অন্তর্গত সরহিন্দ আক্রমণ করেন । পৃথ্বীরাজও থানেশ্বরের অদূরে তরাইনের যুদ্ধেক্ষেত্রে মােহম্মদ ঘুরীকে বাধা দেন । মুসলমান সৈন্যবাহিনী এই যুদ্ধে পরাজিত হয় এবং হিন্দু সেনাপতি স্কন্দের বর্শাঘাতে আহত মােহম্মদ ঘুরী যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করেন । কিন্তু এই পরাজয়ের গ্লানি বিস্মৃত হতে অসমর্থ হয়ে এই পরাজয়ের প্রতিশােধ গ্রহণের জন্য তিনি প্রস্তুত হতে শুরু করেন । 

 
প্রশ্ন । তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ ( ১১৯২ খ্রিস্টাব্দ ) সম্বন্ধে কি জান ? 

উত্তর : তরাইনের প্রথম যুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশােধ গ্রহণের উদ্দেশ্যে পরবর্তী বছরে অর্থাৎ ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে গজনীর শাসক মােহম্মদ ঘুরী পুনরায় দিল্লীর চৌহানবংশীয় রাজপুতরাজ পৃথ্বীরাজে রাজ্য আক্রমণ করেন । পৃঙ্খীরাজ এই যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত হন । দ্বিতীয় তরাইনের যুদ্ধের ফলে উত্তর ভারতে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় । 

প্রশ্ন । দিল্লীর সিংহাসনের শেষ রাজা কে ছিলেন ? তিনি কার কাছে পরাজিত হন ?

উত্তর : দিল্লীর সিংহাসনে শেষ হিন্দু রাজা ছিলেন চৌহানবংশীয় রাজপুতরাজ পৃথ্বীরাজ । তিনি গজনীর শাসক মােহম্মদ ঘুরীর কাছে ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয়ত রাইনের যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত হন । 

প্রশ্ন । ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত মােহম্মদঘুরীর দুজন সেনাপতির নাম লিখ । 

উত্তর : মােহম্মদ ঘুরীর ভারত বিজয়ের সময় তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে যুক্ত ছিলেন সেনাপতি কুতুব - উদ -দিন আইবক এবং সেনাপতি ইখতিয়ার - উদ - দিন মােহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি ।

দিল্লী বিজয়ের পর মােহম্মদ ঘুরী কুতুব-উদ -দিন আইবককে তাঁর ভারতীয় রাজ্যের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন । ইখতিয়ার - উদ - দিন মােহম্মদ - বিন - বখতিয়ার খলজি বিহার ও বাংলা জয় করে পূর্ব ভারতের মুসলিম কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন । 

প্রশ্ন । ভারতের মুসলিম সাম্রাজ্য প্রথম প্রতিষ্ঠা কে করেন ?

উত্তর : কুতুব - উদ - দিন আইবক প্রথম জীবনে মােহম্মদ ঘুরীর ক্রীতদাস ছিলেন । পরে যােগ্যতার জন্য মােহম্মদ ঘুরী বিজিত ভারতের শাসনকর্তা নিযুক্ত হন এবং রাজ্যের নিরাপত্তার জন্য তিনি লাহােরে রাজধানী স্থাপন করেন । তবে কুতুব -উদ - দিন আইবকই দিল্লীর প্রথম সুলতান বলে পরিচিত । আততায়ীর হস্তে মােহম্মদ ঘুরীর মৃত্যুর পর ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি নিজেকে স্বাধীন সুলতান বলে ঘােষণা করেন । ১২১০ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যু হয় ।


প্রশ্ন । দিল্লীর প্রথম সুলতান কে ? তিনি কবে সুলতান হন ?  

উত্তর : কুতুব - উদ - দিন আইবক হলেন দিল্লীর প্রথম সুলতান । তিনি উত্তর ভারত বিজেতা মােহম্মদ ঘুরীর বিশ্বস্ত অনুচর ছিলেন । মােহম্মদ ঘুরীর মৃত্যুর পর তিনি তাঁর প্রভুর উত্তর ভারতের বিজিত রাজ্যের উত্তরাধিকারী হন এবং ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে দিল্লীর সুলতানীর প্রতিষ্ঠা করেন । 
 
প্রশ্ন । কুতুবমিনার সম্বন্ধে কী জন ? 

উত্তর : দিল্লী শহর থেকে ১২ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত ২৩৫ ফুট উচ্চ কুতবমিনার একটি ঐতিহাসিক কীর্তিস্তম্ভ । ১১৯৯ খ্রিস্টাব্দে কুতব-উদ -দিনের শাসনকালে কুতবমিনারের নির্মাণ কার্য শুরু হয় , তাঁর পরবর্তী সুলতান ইলতুতমিসের রাজত্বকালে কুতবমিনারের নির্মাণ কার্য শেষ হয় । 
 
কুতব-উদ -দিন নামক এক মুসলিম ফকিরের কবরেব ওপর মিনারটি নির্মিত হয় বলে এর কুতুবমিনার । কুতুবমিনার ভারতের মুসলিম স্থাপত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন ।

প্রশ্ন । কুতুব -উদ -দিন আইবকের আমলে নির্মিত দুটি স্থাপত্য শিল্পের নাম লিখ ? 

উত্তর : কুতুব - উদ - দিন আইবকের আমলে নির্মিত দুটি শিল্প হল : দিল্লীর কোয়াৎ- উল - ইসলাম এবং আজমীরের আড়াই দিন কা ঝােপড়া ।

প্রশ্ন । চেঙ্গিজ খান কখন ভারত সীমান্তে এসে উপস্থিত হন ? তখন দিল্লীর সুলতান কে ছিলেন ? 

উত্তর : ইলতুতমিসের রাজত্বকালে মােঙ্গলরা চেঙ্গিসখানের নেতৃত্বে সিন্ধুনদের অববাহিকায় এসে উপস্থিত হন । চেঙ্গিস খান ছিলেন ধর্মে সামানী বৌদ্ধ, জাতিতে মােঙ্গল , বৃত্তিতে যােদ্ধা । তাঁর প্রকৃতি নাম তােমমাচিন এবং উপাধি চেঙ্গিস অর্থাৎ পৃথিবী দাহক । ১২২১ খ্রিস্টাব্দে তিনি তাঁর শত্রু খিবার সুলতান জালাল - উদ -দিন মঙ্গবনীর পশ্চাদ্ধাবন করে পাঞ্জাবে উপস্থিত হন । চেঙ্গিস খান কর্তৃক আক্রান্ত মঙ্গবনীর ইলতুতমিসের আশ্রয় প্রার্থনা করেন কিন্তু সম্ভাব্য মােঙ্গল আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তিনি এই প্রার্থনা প্রত্যাখ্যান করেন । ভারত সীমান্তে কিছু দিন অবস্থানের পর চেঙ্গিস খান স্বদেশাভিমুখে যাত্রা করেন এবং এক বিরাট ধ্বংসলীলার হাত থেকে ভারত মুক্তি পায় । 

প্রশ্ন । ইলতুতমিসের খ্যাতির তিনটি কারণ কি ?  

উত্তর : সিংহাসনের প্রতিদ্বন্দ্বীদের পরাজিত করে দিল্লীর সিংহাসন নিষ্কন্টক করা , রাজ্যের সর্বত্র শান্তিও শৃঙ্খলা স্থাপন করা এবং বাগদাদের খলিফার কাছ থেকে স্বীকৃতি আদায় করা হল সুলতান ইলতুতমিসের প্রধান তিনটি কীর্তি । তবে লাহাের থেকে দিল্লীতে রাজধানী স্থানান্তরিত করতে তিনি রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় দেন । 


প্রশ্ন । কোন মহিলা দিল্লীর সুলতান হন ; তাঁর পতনের কারণ কি ? 

উত্তর : ইলতুতমিসের মৃত্যুর পর ১২৩৬ খ্রিস্টাব্দে রাজিয়া দিল্লীর সিংহাসনে বসেন । রাজিয়াই একমাত্র নারী যিনি দিল্লীর সিংহাসনে বসার সুযােগ পান । অভিজাত মুসলমান ও আমীররা মহিলার শাসন মেনে নিতে অস্বীকার করে এবং তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে । ফলে ১২৪০ খ্রিস্টাব্দে তিনি সিংহাসনচ্যুত এবং নিহত হন । 
 

প্রশ্ন । সুলতানের ভূমিকা সম্পর্কে বলবনের ধারণা কি ছিল ? 

উত্তর : সুলতান হিসাবে বলবন ছিলেন আদর্শ । তিনি বিশ্বাস করতেন কেবল সামরিক শক্তি দ্বারা বিশাল দেশের শাসনব্যবস্থা দীর্ঘকাল পরিচালনা সম্ভব নয় ।তাই তিনি ন্যায় ও পক্ষপাতী বিচারব্যবস্থা প্রবর্তন , সুদক্ষ রাজকর্মচারী নিয়ােগ , অপরাধীদের কঠোর শাস্তি বিধান , আড়ম্বর ও জাঁকজমকপূর্ণ রাজসভা পরিচালনা এবং কঠোর হস্তে দ্রুত অরাজকতা দমন প্রভৃতির ব্যবস্থা করেন । 


প্রশ্ন । মেওয়াটি কারা ছিল ? দিল্লীর কোন সুলতান তাদের দমন করেন ?

উত্তর : দিল্লী ও তার পাশ্ববর্তী অঞ্চলের দুর্ধর্ষ দস্যুদল মেওয়াটি নামে পরিচিত ছিল । দিল্লীর সুলতান গিয়াস - উদ - দিন বলবন তাদের দমন করেন । 





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন