বাংলার বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণে বলবনের ভূমিকা নিরূপণ করাে ।

অনাস পাস ইতিহাস honours pass general history questions answers প্রশ্নোত্তর বাংলার বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণে বলবনের ভূমিকা নিরূপণ করাে banglar bidroho niyontrone bolboner bhumika nirupon koro


উত্তর : বঙ্গদেশ বরাবরই দিল্লির কাছে অস্বস্তির কারণ ছিল । নাসিরউদ্দিনের শেষদিকে আর সালান খাঁ এবং তার পুত্র তাতার খাঁ প্রায় স্বাধীনভাবেই রাজত্ব করতেন । তাতার খাঁ মারা গেলে অথবা কোন কারণে গদিচ্যুত হলে তুঘ্রিল খান বাংলার শাসনকর্তা নিযুক্ত হন । তিনি শুরুতে বলবনের ক্রীতদাস ছিলেন । নিজ মেধা ও যােগ্যতা বলে তিনি বলবনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন ।এভাবেই এক সময় তিনি বাংলার গভর্ণরের দায়িত্ব লাভ করেছিলেন । শাসক হিসাবে তিনি যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেন । 

মােঙ্গল আক্রমণ ও দিল্লি থেকে বাংলার দূরত্ব এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুঘ্রিলকে প্ররোচিত করে থাকতে পারে । স্বাধীন সুলতনি হওয়ার বাসনাতে তিনি প্রভুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘােষণা করেন । এভাবে বিপুল ধনসম্পদ তার হস্তগত হয় । এ সকল সম্পদ প্রথা অনুযায়ী সুলতানের কাছে না পাঠিয়ে তিনি নিজে রেখে দেন এবং কিছুটা সভাসদ ও সমর নায়কদের মধ্যে বন্টন করেন । তিনি বিশাল অর্থের ভাগ পেয়ে লখণেীতির অভিজাত বর্গ তুঘ্রিলের আনুগত্য মেনে নেন । সমসাময়িক গ্রন্থ ‘তাবাক - ই- নাসিরি’ থেকে জানা যায় স্বাধীনতা ঘােষণা করে তুঘ্রিল সুলতান মুঘিসউদ্দিন তুঘ্রিল উপাধি গ্রহণ করেন এবং নিজ নামে খুৎবাপাঠ ও মুদ্রা জারি করেন । 
 
এই বিদ্রোহের সংবাদ বৃদ্ধ সুলতানকে ক্ষুব্ধ করে । তুঘ্রিলের বিদ্রোহ দমন করার জন্য তিনি এক বিশাল বাহিনী প্রেরণ করেন । এ বাহিনীর সেনাপতিত্ব গ্রহণ করেন আমীর খান । দিল্লী বাহিনী লখণৌতিতে এসে তুঘ্রিল বাহিনীর প্রতিরােধের মুখােমুখি হয় । অবশেষে যুদ্ধে দিল্লী বাহিনীর পরাজয় ঘটে এবং তারা রাজধানীতে ফিরে আসতে বাধ্য হয় । বলবনের সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা ছিল বলে পরাজিত দিল্লির সৈন্যদের অনেকেই সুলতানের কোপানল থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য হয় সামরিক চাকুরি থেকে ইস্তফা দেয় , নয়তাে তুঘ্রিলের বাহিনীতে যােগ দেয় । এরপর বলবন তার বিরুদ্ধে আর একটি সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেন , কিন্তু এই অভিযানও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় । বলবনের জন্য এটি ছিল একটি অত্যন্ত অপমানজনক সংবাদ । বলবন তুঘ্রিলকে কঠোর শাস্তি দেবার শপথ নেন । বুখ খানকে সঙ্গে নিয়ে সৈন্যবাহিনীর অগ্রভাগে থেকে লখনৌতির দিকে অগ্রসর হন । পথিমধ্যে অযােধ্যা সহ অনেক স্থান থেকে তিনি সৈন্যবাহিনী তার বাহিনীতে যুক্ত করতে থাকেন । এইভাবে দুই লক্ষ সৈন্যের এক বিশাল বাহিনী নিয়ে বলবন লখনৌতিতে পোঁছান । বলবনের আগমন সংবাদে ভীত হয়ে তুঘ্রিল রাজধানী ছেড়ে উড়িষ্যার বনাঞ্চলে আশ্রয় নেন । পরিশেষে অনেক চড়াই উৎরাই – এরপর তুঘ্রিল বলবনের বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন । তাকে তৎক্ষণাৎ হত্যা করা হয় । এবং তুঘ্রিলের পরিবার - পরিজন ও অনুচরদের লখনৌতির বাজারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেন । 


তুঘ্রিলের বিদ্রোহ দমন করে বলবন বুখরা খানকে বাংলার শাসনকর্তা নিযুক্ত করে রাজধানীতে ফিরে আসেন । এ প্রসঙ্গে সুলতানের গুণকীর্তন করতে গিয়ে বারণী মন্তব্য করেছেন যে তুঘ্রিলের বিদ্রোহ দমনের মধ্যে দিয়ে সুলতান তার শক্তিমত্তার পূর্ণ প্রকাশ ঘটাতে পেরেছিলেন । জনসাধারণ নিশ্চিত হয় সুলতান তাদের শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানে সক্ষম । তার যােগ্য শাসনে রাজ্যের সর্বত্র শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । এভাবে বলবন ক্ষমতা ও মর্যাদার উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত হয় । 

 
নিজ পুত্র বুখ খানকে তিনি বঙ্গদেশের দায়িত্বে রেখে আসেন । ১২৮৬ খ্রিঃ বলবনের জ্যেষ্ঠ পুত্র মহম্মদ মােঙ্গলদের সঙ্গে একটি সংঘর্ষে নিহত হন । এতে বলবন ভেঙে পড়েন এবং পর বৎসরই ( ১২৮৭ ) তিনি মারা যান । মৃত্যুশয্যায় তিনি তার অপর পুত্র বুখরা খানকে ডেকে পাঠান এবং তার উপর দিল্লী সুলতানীর ভার ন্যস্ত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন । কিন্তু দিল্লীর ষড়যন্ত্রী আবহাওয়া বুখরার পছন্দ হয়নি । তিনি বঙ্গদেশে ফিরে যাওয়াই কাম্য বলে মনে করলেন । পথে তিনি পিতার মৃত্যু সংবাদ পেয়েও নিজ সিদ্ধান্তে অটল রইলেন, দিল্লী ফিরে গেলেন না, মৃত্যুর পূর্বে বলবন তার পৌত্র ( মহম্মদের পুত্র ) কাইখসরুকে উত্তরাধিকারী করে গিয়েছিলেন । 



 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন