বাহমনী রাজ্য ভেঙে যে পাঁচটি স্বাধীন রাজ্যের সৃষ্টি হয়েছিল সে সম্পর্কে আলােচনা করাে ।

অনাস পাস ইতিহাস honours pass general history questions answers প্রশ্নোত্তর বাহমনী রাজ্য ভেঙে যে পাঁচটি স্বাধীন রাজ্যের সৃষ্টি হয়েছিল সে সম্পর্কে আলােচনা করাে bahomoni rajya venge je panchti swadhin rajyar srishti hoyechilo se somporke alochona koro


উত্তর : মহম্মদ বিন তুঘলকের রাজত্বের শেষদিকে সাম্রাজ্য বিশৃঙ্খলার সুযােগে দাক্ষিণাত্যের আমীররা দিল্লির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘােষণা করে হাসান শাহ নামে এক ব্যক্তির অধীনে একটি নতুন রাজ্য স্থাপন করে । নতুন রাজ্যের সুলতান হয়ে হাসান আলাউদ্দিন বাহমন শাহ উপাধি গ্রহণ করেন । এই নাম থেকেই নতুন রাজ্যের নাম হয় বাহমনী রাজ্য । এই রাজ্য স্থাপিত হয়েছিল নর্মদা ও কৃষ্ণা নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে । হাসান নিজেকে পারস্যের প্রসিদ্ধ বীর বাহমনের বংশধর বলে দাবী করতেন বলে বাহম শাহ নাম নিয়েছিলেন । ফেরিস্তার মতে প্রথম জীবনে হাসান গঙ্গু নামে এক ব্রাহ্মণের অধীনে কাজ করতেন । ব্রাহ্মণের প্রতি কৃতজ্ঞতাবশতঃ তিনি বাহমন শাহ নাম নেন । 



বাহমন সাম্রাজ্যের বিস্তার : আলাউদ্দিন বাহমন শাহ ১৩৪৭ থেকে ১৩৫৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন । ১৩৫১ খ্রিস্টাব্দে মহম্মদ -বিন - তুঘলকের মৃত্যু হলে বাহন শাহ দাক্ষিণাত্যের এক বিশাল অঞ্চলে বিস্তার করেন । বিদর , গােয়া দাভােল , কোলাপুর প্রভৃতি অঞ্চলে তার আধিপত্য বিস্তৃত হয় । তার রাজধানী ছিল গুলবর্গা । সমগ্র রাজ্যকে  তিনি দৌলতাবাদ , গুলবর্গা , বেয়ার ও বিদর – এই চারটি প্রদেশে বিভক্ত করেন । উত্তরে বেরার থেকে দক্ষিণে কৃষ্ণ নদী এবং পশ্চিমে আরব সাগর থেকে পূর্বে তেলেঙ্গানা পর্যন্ত তাঁর সাম্রাজ্য বিস্তৃত । 
 
ফিরােজ শাহের গুণাবলী : মহম্মদ শাহের মৃত্যুর পর সিংহাসনের অধিকার নিয়ে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সংগ্রামের ফলে কুড়ি বছরে বাহমনী রাজ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল । অবশেষে ১৩৯৭ খ্রিস্টাব্দে ফিরােজ শাহ সুলতান হলে রাজ্যে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয় । এই সময়ে বাহমনী রাজ্যের সঙ্গে বিজয়নগর রাজ্যের তিনবার যুদ্ধ হয় । প্রথম দুবার ফিরােজশাহ জয়লাভ করলেও তৃতীয়বার বিজয়নগরের কাছে তিনি পরাজিত হন । ফিরােজ শাহের সময় বামনী রাজ্য ভারতবর্ষের সংস্কৃতির কেন্দ্ররূপে গড়ে ওঠে । 


আহমেদ শাহের কৃতিত্ব : ১৪২২ খ্রিস্টাব্দে ফিরােজ শাহকে সিংহাসনচ্যুত ও নিহত করে আহম্মদ শাহ সুলাতন হন । আহম্মদ শাহ ছিলেন রণনিপুন যােদ্ধা । বিজয়নগরের রাজা দ্বিতীয় দেবরায়কে পরাজিত করে তিনি প্রচুরক্ষ তিপূরণ ও বার্ষিক কর দানের প্রতিশ্রুতি লাভ করেছিলেন । এছাড়া বরঙ্গলের কাকতীয় রাজাকে পরাজিত করে বরঙ্গলকে তিনি নিজ রাজ্যভুক্ত করেন । খান্দেশের সুলতানকেও তিনি পরাজিত করেন । কিন্তু উড়িষ্যার বিরুদ্ধে তার অভিযান ব্যর্থ হয়েছিল । তিনি বাহমনী রাজ্যের রাজধানী গুলবর্গা থেকে বিদরে স্থানান্তরিত করেন । ১৪৩৫ খ্রিস্টাব্দে তার মৃত্যু হয় । 


মামুদ গাওয়ানের উত্থান ও কৃতিত্ব : পরবর্তী সুলতান আলাউদ্দিন ( ১৪৩৫ - ৫৭ ) বিজয়নগরকে যুদ্ধে পরাজিত করেছিলেন । তার পর সিংহাসনে বসেন হুমায়ন শাহ ( ১৪৫৭-৬১ ) । তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠুর প্রকৃতির ছিলেন বলে ‘জালিম’ নামে অভিহিত হতেন । হুমায়ন শাহের মৃত্যুর পর তার নাবালক পুত্র সিংহাসন লাভ করেন । নাবালক সুলতানের মন্ত্রীরূপে প্রকৃত ক্ষমতা ভােগ করতেন মামুদ গাওয়ান । সাহসী , প্রজা হিতৈষী , ন্যায়পরায়ণ , বিদ্যোৎসাহী মামুদ গাওয়ানের সময় বাহমনী রাজ্য উন্নতির শিখরে আরােহণ করেছিল । 


বাহনীর পতন : পরবর্তীকালে ঈর্ষান্বিত ওমরাহরা মামুদ গাওয়ানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে রাজদ্রোহের অভিযােগে অভিযুক্ত করেন । ১৪৮২ খ্রিস্টাব্দে সুলতান তৃতীয় মহম্মদ শাহ মামুদ গাওয়ানকে মৃত্যদণ্ডে দণ্ডিত করেন । মামুদের মৃত্যুর পর শাসকদের দুর্বলতার সুযােগে বাহমানী রাজ্যের দ্রুত পতন হয় । প্রাদেশিক শাসনকর্তারা একে একে স্বাধীনতা ঘােষণা করলে বামনী রাজ্য ভেঙে পাঁচটি রাজ্যের উদ্ভব হয় । এই পাঁচটি রাজ্য হল বিজাপুর ,গােলকুণ্ডা , আহম্মদনগর , বেরার ও বিদর । 


বাহমনীর পাঁচটি রাজ্যের জন্ম :  বাহমনী রাজ্যের ধ্বংসস্তুপের ওপর যে পাঁচটি সুলতানী রাজ্যের উদ্ভব হয়েছিল , তার মধ্যে বিজাপুরের রাজ্যটি ছিল সর্বাধিক উল্লেখযােগ্য । ইউসুফ 



আদিল শাহ ছিলেন বিজাপুর রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ।তার প্রতিষ্ঠিত রাজবংশ আদিল শাহী বংশ নামে পরিচিত । মামুদ গাওয়ানের অধীনে আদিল শাহ উচ্চ রাজপদে নিযুক্ত ছিলেন । ১৪৯০ খ্রিস্টাব্দে তিনি স্বাধীন বিজাপুর রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন । তিনি ছিলেন সুদক্ষ শাসক ও ধর্ম সম্পর্কে উদার । তিনি ছিলেন ন্যায় বিচারক ও প্রজাহিতৈষী শাসক । বিদ্যা ও বিদ্বানদের প্রতি তার অনুরাগ ছিল প্রবল । এই বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ সুলতান ছিলেন দ্বিতীয় ইব্রাহিম আদিল শাহ ( ১৫৭৯ -১৬২৬ খ্রিঃ ) । ১৬৮৬ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট ঔরঙ্গজেব বিজাপুর রাজ্যটি মােঘল সাম্রাজ্যভুক্ত করেন । 


মােঘল সাম্রাজ্যভুক্ত গােলকুণ্ডা : অপরদিকে রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কুতুব শাহ । তিনি প্রথমে ছিলেন বামনী রাজ্যের একজন তুর্কী কর্মচারী । ১৫১৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি স্বাধীনতা ঘােষণা করেন । ১৬৮৭ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট ঔরঙ্গজেব এই রাজ্যটি মােঘল সাম্রাজ্যভুক্ত করেন । 


মােঘল সাম্রাজ্যভুক্ত আহম্মদনগর : আহম্মদনগর রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মালিক আহম্মদ । ১৪৯০ খ্রিস্টাব্দে তিনি স্বাধীনতা ঘােষণা করেন । তিনি আহম্মদনগরের প্রতিষ্ঠা করে সেখানে রাজধানী স্থাপন করেন । ১৫৬৫ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে ওই রাজ্যের পতন শুরু হয় । 


তালিকোটার যুদ্ধ : উপরােক্ত পাঁচটি সুলতানি রাজ্যের মধ্যে একমাত্র বিজাপুর ও গােলকুণ্ডা রাজ্যের কয়েকজন দক্ষ শাসকের আবির্ভাব হয়েছিল । হিন্দু সাম্রাজ্য বিজয়নগরের সঙ্গে এই পাঁচটি সুলতানি রাজ্যের দীর্ঘকাল যুদ্ধবিগ্রহ চলেছিল । অবশেষে তারা সম্মিলিতভাবে ১৫৬৫ খ্রিস্টাব্দে তালিকোটার যুদ্ধে বিজয়নগরকে পরাজিত করেন । কিন্তু এদের পারস্পরিক বাদ -বিসম্বাদ দক্ষিণ ভারতের শান্তি ও শৃঙ্খলার পথে অন্তরায় হয়ে উঠেছিল এবং পরবর্তীকালে একে একে রাজ্যগুলি মােঘল সাম্রাজ্যভুক্ত হয় ।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন