ইয়ংবেঙ্গল আন্দোলন ( নব্যবঙ্গ ) বলতে কী বােঝ ? এই আন্দোলনের সীমাবদ্ধতা লেখ ।

Clg history questions answers কলেজ প্রশ্নোত্তর ইয়ংবেঙ্গল আন্দোলন নব্যবঙ্গ  বলতে কী বােঝ এই আন্দোলনের সীমাবদ্ধতা লেখ youngbengol andolan nobbobango bolte ki bojho ai andoloner simaboddhota lekho


উত্তর : বাংলার নবজাগরণের একটি অধ্যায় ছিল ইংয়বেঙ্গল বা নব্যবঙ্গ আন্দোলন । ঊনবিংশ শতকের বিশেষর দশক থেকে চল্লিশের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন চলে । এই আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ছিলেন হেনরি ভিভিয়ান ডিরােজিও ( ১৮০৯-৩১ )। তিনি ১৮২৬ খ্রিঃ ( মতান্তরে ১৮২৭ অথবা ২৮ খ্রিঃ ) হিন্দু কলেজে সাহিত্য ও ইতিহাসের শিক্ষক রূপে যােগ দেন । তিনি ছাত্ৰমণ্ডলীর মধ্যে অসাধারণ জনপ্রিয়তা লাভ করেন । তার অসাধারণ মেধার দ্বারা ছাত্রদের হৃদয়ে যুক্তিবাদ, ন্যায়বিচারবােধ ও স্বদেশ হিতৈষণার বীজ বপন করা হয় । তাকে কেন্দ্র করে ইয়ংবেঙ্গল গােষ্ঠী গড়ে ওঠে । তাঁর অনুগামী ছাত্ররা হিন্দু সমাজের কুসংস্কার ও ধর্মীয় আত্মবিশ্বাসকে শাণিত আক্রমণ করেন । 


নব্যবঙ্গ গােষ্ঠীর মধ্যে ছিলেন কৃষ্ণমােহন বন্দ্যোপাধ্যায়, রসিক কৃষ্ণ মল্লিক, রামগােপাল ঘােষ , রামতনু লাহিড়ী , রাধানাথ শিকদার প্রমুখ । রসিক কৃষ্ণ মল্লিক প্রকাশ্য আদালতে বলেন যে “আমি গঙ্গা নদীর পবিত্রতা মানি না” ইয়ংবেঙ্গল গােষ্ঠীর কোনাে এক সদস্য কলীঘাটে দেবী মূর্তিকে সম্বােধন করে বলেন যে ‘Goog Morn-ing Madam’ ইয়ংবেঙ্গল গােষ্ঠীর এই সকল আচারণ দ্বারা হিন্দুদের প্রচলিত ধর্ম - বিশ্বাস,খাদ্য অখাদ্য বিচার - ও অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে চেষ্টা করেন । 

ডিরােজিওর শিষ্যমণ্ডলী ডিরােজিওর মৃত্যুর পর সমালােচনামূলক আন্দোলন আরও কিছুকাল চালিয়ে যান । কৃষ্ণমােহন তাঁর ‘এনকুয়ােরার’ ( The Bnquirer ) পত্রিকায় এবং ‘পার্সিকিউটেজ’ পুস্তিকায় হিন্দু সমাজকে তীব্র আক্রমণ করেন । 


ডেভিড কফ ইয়ংবেঙ্গল আন্দোলনের ত্রুটিগুলি বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন । তার মতে তারা একটি আদর্শের সংকটে ভারাক্রান্ত ছিলেন । তারা দেশের গঠনমূলক কাজে আত্মনিয়ােগ না করে সবকিছুকে শুধু নস্যাৎ করেন । ফলে তারা জনসাধারণের আস্থা হারিয়ে নিন্দিত হন । অবশ্য পরবর্তীকালে তাদের মধ্যে থেকে বহু গঠনমূলক কর্মীর দেখা পাওয়া যায় । এই গােষ্ঠীর উগ্রতা সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে কমে আগে । রসিক কৃষ্ণ মল্লিক ‘জ্ঞানান্বেষণ’ পত্রিকায় সরকারের বিচার - ব্যবস্থা , পুলিশী নীতি ও কোম্পানির শাসনের সমালােচনা করেন । ডিরােজিওপন্থীদের মধ্যে দেশপ্রেমের অভাব ছিল না । কিন্তু তাদের আন্দোলনের বিফলতায় কয়েকটি কারণ ছিল ।


প্রথমত । এই আন্দোলন ছিল সমাজের উচ্চবর্ণের মধ্যে সীমাবদ্ধ । সাধারণ মানুষের মধ্যে এই আন্দোলনের প্রভাব ছিল না । 

দ্বিতীয়ত । এই গােষ্ঠী হিন্দু সমাজের ভেতর থেকে সমাজকে ভালােবেসে তার সংস্কারের চেষ্টা করেননি । 

তৃতীয়ত । এরা ব্রিটিশ সরকারের শােষণমূলক নীতি ও সাম্রাজ্যবাদী শাসন সম্পর্কে অজ্ঞ ছিলেন এবং প্রতিবাদের দিক থেকেও দুর্বল ছিলেন । 

চতুর্থত । চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ও কুটির শিল্পের ধ্বংসের ফলে দেশে যে নিদারুণ দারিদ্র দেখা দেয় সে সম্পর্কে তারা সচেতন ছিলেন না । 

পঞ্চমত । মুসলিম সম্প্রদায়কে তারা তাদের আন্দোলনের আবর্তে টেনে আনতে ব্যর্থ হন । 

সবশেষে অধ্যাপক সুশােভন সরকারের মতে , ইয়ংবেঙ্গল আন্দোলনের প্রধান সীমাবদ্ধতা হল এই যে, একটি প্রসারণশীল স্থায়ী আদর্শবাদ ও আন্দোলনকে দৃঢ়ভাবে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতাে ক্ষমতা ইয়ংবেঙ্গল গােষ্ঠীর ছিল না । তাছাড়া ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামাের মধ্যে পাশ্চাত্য উদারতন্ত্রের বিকাশ সম্ভব ছিল না । ফলত নবজাগরণের প্রেক্ষাপটে এই আন্দোলনের গতিবেগ নষ্ট হয় । অধ্যাপক সুমিত সরকার তার ‘Complexities of young Bengal' নামক প্রবন্ধে এঁদের মূল্যায়নের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে এঁদের প্রগতিশীলতার মুখােশ খুলে দিয়েছেন । ইয়ংবেঙ্গলকে সমালােচনা করে তাদের “a generation without fathers and children ” বলে অভিহিত করা হয়েছে ।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন