নৌবিদ্রোহের কারণ ও গুরুত্ব আলােচনা করাে ।

Clg history questions answers কলেজ প্রশ্নোত্তর নৌবিদ্রোহের কারণ ও গুরুত্ব আলােচনা করাে noubidroher karon o gurutto alochona koro


উত্তর : ১৯৪৬ খ্রিঃ ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতীয় নৌ - বাহিনীর বিদ্রোহ ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক অতি উল্লেখযােগ্য ঘটনা । ভারতীয় নৌ -বাহিনীর কর্মীদের সরকার নানা অখাদ্য সরবরাহ করত তাদের প্রতি অফিসারদের ব্যবহার ছিল কুরুচিপূর্ণ ,বেতন ছিল খুবই সামান্য । অথচ এই একই কাজে নিযুক্ত ইংরেজ  কর্মচারীরা অনেক বেশি সুযােগ -সুবিধা ভােগ করত । এই সব কারণে ভারতীয় নৌ - বাহিনীর বহু পূর্ব থেকেই প্রবল অসন্তোষ ছিল । 

এই সময় আজাদ হিন্দ বাহিনীর বন্দি সেনাদের বিচারকার্য তাদের মনে বিদ্রোহ প্রেরণার সঞ্চার করে । তারা তাদের দাবিপত্রে ( ১ ) উন্নতমানের খাদ্য ( ২ ) বেতন ও ভাতা বৃদ্ধি ( ৩ ) নৌ -বাহিনীর ভারতীয়করণ ( ৪ ) আজাদ হিন্দ বাহিনীর সৈন্যদের বিরুদ্ধে সকল মামলা প্রত্যাহার ও তাদের মুক্তিদান ইত্যাদি দাবি পেশ করে । 
বিদ্রোহীরা ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি’ অনুকরণে নৌ -বাহিনীর নামকরণ করে ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল নেভি’ । আজাদ হিন্দ বাহিনীর বিচারই যে তাদের মনােভাবে পরিবর্তন এনেছিল তার সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় সরকারি রিপাের্ট থেকে । ১৮ ফেব্রুয়ারি বােম্বাই- এর নৌ - প্রশিক্ষণ জাহাজ ‘তলােয়ার’- এর  ১৫০০০ জন নাবিক অখাদ্য আহার্য গ্রহণে অস্বীকৃত হয় । ১৯ ফেব্রুয়ারি তারা ইউনিয়নজ্যাক ( ব্রিটিশ পতাকা ) নামিয়ে জাহাজে কংগ্রেস , লীগ , কমিউনিস্ট পার্টির তিনটি পতাকা তুলে দেয় ‘রয়াল ইন্ডিয়ান নেভি’ - র নাম রাখে ‘ইন্ডিয়ান নেভি' ।

গুরুত্ব : এই বিদ্রোহের গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ আছে । রজনীকান্ত দত্ত, হীরেন্দ্রনাথ মুখােপাধ্যায় , সুমিত সরকার , গৌতম চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ ঐতিহাসিক ও বুদ্ধিজীবীদের মতে এই বিদ্রোহ ভারত ইতিহাসে নবযুগের সূচনা করে । তার মতে , এই বিদ্রোহের ফলে আতঙ্কিত হয়ে ইংরেজ সরকার শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের উদ্দেশ্যে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের সঙ্গে বােঝাপাড়ায় আসার জন্য ভারতে মন্ত্রী মিশন প্রেরণ করে । 


১৮ ফেব্রুয়ারি নৌ -বিদ্রোহ শুরু হয় । এবং তার পরদিনই ১৯ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রী মিশন প্রেরণের সরকারি সিদ্ধান্ত ঘােষিত হয় । অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ মুখােপাধ্যায়ও অনুরূপ মতামত প্রকাশ করেন । ড . সুমিত সরকার বলেন , এই ‘বীরােচিত সংগ্রাম’ ভারতের ইতিহাসে অনেকাংশে এক বিস্মৃত অধ্যায় । 

অধ্যাপক গৌতম চট্টোপাধ্যায় একে ‘প্রায় বিপ্লব’ বা Almost Revolution বলে অভিহিত করেন । অধ্যাপক অমলেশ ত্রিপাঠী , অধ্যাপিকা সুচেতা মহাজন প্রমুখ ঐতিহাসিক এ ধরনের বিশ্লেষণে একদেশদর্শিতা লক্ষ্য করেছেন । তাদের মতে নৌ -বিদ্রোহ সাধারণ জনমানসে বিশেষ ছাপ ফেলতে পারেনি । আজাদহিন্দের ধৃত সেনাদের মুক্তির দাবিতে কলকাতায় তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠলেও নৌ -বিদ্রোহ নিয়ে বিশেষ কোনাে আলােড়ন হয়নি বা গ্রামাঞ্চলে এর কোনাে প্রভাব পড়েনি ।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন