দাসবংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে কুতুবউদ্দিন আইবকের কৃতিত্ব আলােচনা কর ।

অনাস পাস ইতিহাস honours pass general history questions answers প্রশ্নোত্তর দাসবংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে কুতুবউদ্দিন আইবকের কৃতিত্ব আলােচনা কর dasbongsher protisthata hisabe kutubuddin aibker krititto alochona koro


উত্তর : ১২০৬ খ্রিঃ মহম্মদ ঘুরির মৃত্যু হলে তার শাসনভার গ্রহণ করেন তার কর্মচারী কুতুবউদ্দিন আইবক । ১২০৮ খ্রিঃ তিনি দিল্লির স্বাধীন শাসক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন । তার শাসনকাল স্বল্পস্থায়ী হলেও ঘুরির আধিপত্য থেকে বিচ্ছিন্ন করে তিনি দিল্লীতে স্বাধীন সুলতানী শাসনব্যবস্থা স্থাপন করেন । 

ঘুরির মৃত্যুর পর কুতুবউদ্দিন লাহাের যাত্রা করেন এবং লাহােরের নাগরিকদের সমর্থন করেন । উত্তর পশ্চিম সীমান্তের প্রতিদ্বন্দ্বী তাজউদ্দিনকে প্রতিহত করার পর কুতুবউদ্দিন তাঁর পূর্ব সীমান্তে , বাংলার দিকে দৃষ্টি দেন । বাংলায় বকতিয়ার খলজি নিহত হবার পর কুতুবউদ্দিন পরােক্ষ ও প্রত্যক্ষ হস্তে আলিমদান শাসনের সূচনা করেন । বাংলায় দিল্লীর অধীনে রাজত্ব প্রতিষ্ঠা হয় । 

কুতুবউদ্দিন আইবক সুলতানী সাম্রাজ্যের বিস্তার অপেক্ষা নিরাপত্তা ও সংগঠনে বেশী নজর দেন ।তিনি রাজপুত শক্তিকে সম্পূর্ণ জয় করার দিক থেকে বিরত থাকেন । তুর্কী ও আমিরদের তিনি বশ্যতায় এনে দিল্লীর সুলতানীর ঐক্য ও সংহতি রক্ষা করেন । তার প্রধান কৃতিত্ব ছিল গজনীর তাজউদ্দিনের আগ্রাসনের হাত থেকে দিল্লীর সুলতানীকে রক্ষা করা । তিনি গজনীর মত মধ্য এশিয়ার রাজনীতিতে দিল্লীকে না জড়িয়ে দিল্লীর সুলতানীকে ভারতীয় চরিত্র দেন । তিনি দিল্লীতে রাজধানী স্থাপন করে সুলতানী সাম্রাজ্যের ভবিষ্যত অগ্রগতির সূচনা করেন । 
 
কুতুবউদ্দিনকে দিল্লীর স্বাধীন সুলতান হিসেবে মেনে নিতে অনেকের মতবিরােধ আছে । ডঃ আর.পি. ত্রিপাঠী মনে করেন কুতুবউদ্দিন আইবককে দিল্লীর স্বাধীন সার্বভৌম সম্রাট বলা যায় না । 

তবে দিল্লীর সুলতানীর প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে কুতুবউদ্দিনের নাম নস্যাৎ করা যায় না । কারণ তিনি সর্বপ্রথম গজনীর কৃতিত্ব অস্বীকার করে দিল্লীর স্বাধীনতা ঘােষণা করেন । আবার ঘুরির মৃত্যুর পর যখন ভারতে বিস্তৃত সাম্রাজ্য ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয় তখন কর্মচারীরা তাদের উচ্চ আকাঙ্ক্ষা বশত স্বাধীনতা ঘােষণার উদ্যোগ নেয়  , তখন কুতুবউদ্দিন তাদের দমন করে ভারতে তুর্কী সাম্রাজ্য রক্ষা করেন । 

১২০৬ - ১২১০ খ্রিঃ পর্যন্ত স্বাধীন রাজত্বকালে চার বছর কুতুবউদ্দিন প্রথমত উত্তর পশ্চিম সীমান্ত নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন । মহম্মদ ঘুরীর উত্তরসুরীদের ভারত আক্রমণের চেষ্টা রুখতে সীমান্ত নিকটবর্তী লাহােরে ঘাঁটি স্থাপন করেন । ১২১০ খ্রিঃ লাহােরেই তার মৃত্যু হয় । নতুন রাজ্যজয় কিংবা শাসন সংগঠন সংক্ষিপ্ত রাজত্বকালে কোনাে দিকেই তিনি মন দিতে পারেননি । তার সেরা কৃতিত্ব দিল্লীকে কেন্দ্র করে মধ্য এশিয়ার প্রভাবমুক্ত একটি সার্বভৌম শক্তির ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করা ।

 
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন