উত্তর : (১ ) নগরীর বর্ণনা : সিন্ধু অঞ্চলের বিভিন্ন ধ্বংসাবশেষ থেকে এই সভ্যতার একটি সুস্পষ্ট চিত্র পাওয়া যায় । পরিকল্পিতভাবে নগরী নির্মাণ হরপ্পা সংস্কৃতির সর্বাপেক্ষা উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য । হরপ্পা, মহেঞ্জোদারাে , লােথাল , কলিঙ্গন প্রভৃতি প্রধান প্রধান শহরের মতাে বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নগরীর অস্তিত্বের নিদর্শন সেখানে আবিষ্কৃত হয়েছে । সেইসব নিদর্শন দেখে বােঝা যায় একটি নির্দিষ্ট রীতি অনুযায়ী নগর পরিকল্পনা তৈরি করা হত । ঐতিহাসিক হুইলার মনে করেন যে মহেঞ্জোদারাে ও হরপ্পা নগরী পত্তনের সময় নগর পরিকল্পনা পরীক্ষা নিরীক্ষার পর্যায় অতিক্রম করে উন্নতির চরমসীমায় উপনীত হয় এবং মহেঞ্জোদারাে এবং হরপ্পায় তার নিদর্শন পাওয়া যায় । পরিকল্পিত এই নগরী মূলত দুটি স্বতন্ত্র অংশে বিভক্ত ছিল । একটি অংশ ছিল অপেক্ষাকৃত উঁচু এবং উঁচু অংশে একটি দুর্গ অবস্থিত ছিল এবং সম্ভবত নগরীর কর্তৃস্থানীয় ব্যক্তিগণ সেখানে বাস করত । নগরীর নীচু অংশে সাধারণ মানুষ ও দরিদ্ররা বাস করত । নগরীর দুটি অংশের মধ্যে যােগাযােগের জন্য একটি অপ্রশস্ত রাজপথ থাকত । অনেক সময় নগরীর দূর্গের চার দিকে ইটের তৈরি প্রাচীরও থকত । হরপ্পায় ধ্বংসস্তুপের মধ্যে যে নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে তা থেকে অনুমান করা হয় যে নগরীর নিরাপত্তার জন্য সতর্ক দৃষ্টি দেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রকারের মাঝে মাঝে প্রহরীদের জন্য স্থান নির্দিষ্ট করা হত । মর্টিরমার হইলার সর্বপ্রথম হরপ্পাতে প্রহরীদের জন্য সংরক্ষিত এইরূপ নির্দিষ্ট জায়গার সন্ধান পান । সুরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও দৃঢ় করে তােলার জন্য অনেক সময় তােরণ দ্বার তৈরি করা ছাড়াও পরিখা খনন করার রীতি প্রচলিত ছিল ।
( ২ ) রাস্তাঘাট প্রভৃতি : হরপ্পা সভ্যতায় নাগরিক জীবনের অন্যতম উল্লেখযােগ্য দিক ছিল তার রাস্তাঘাট । সিন্ধু অঞ্চলের প্রতিটি শহরেই ছােট বড় অনেক রাস্তা ছিল । প্রধান সড়কগুলাে ছিল পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে বা উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে বিস্তৃত । রাস্তাঘাটগুলাে অধিকাংশ সময়ই পরস্পরের সঙ্গে সমকোণে যুক্ত ছিল । মহেঞ্জোদারাের রাস্তাগুলাে চওড়ায় নয় থেকে চৌত্রিশ ফুট পর্যন্ত দেখা যায় । কখনও কখনও প্রায় একটানা আধমাইল পর্যন্ত এই রাস্তাগুলাে একেবারে সােজা । বড় সড়কগুলাে শহরকে অনেকগুলাে এলাকায় বিভক্ত করে রাখত । আবার শহরগুলাের এলাকার ভিতরে ছােট ছােট রাস্তা ও গলি দেখা যায় । রাস্তার পাশে অবৈধভাবে যাতে কোন বাড়ি তৈরি না হয় এবং যানবাহন ও মানুষ চলাচলের যাতে কোন অসুবিধা না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি দেওয়া হত ।কলিঙ্গনে রাস্তার মােড়ে খুটির অংশ পাওয়া গিয়েছে । চলন্ত যানবাহনের ধাক্কায় পথের ধারের বাড়িগুলাের যাতে কোন ক্ষতি না হয় সেজন্যই এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল ।
লােথালে একটি রাস্তার একধারে পরপর বারােটি বাড়ির অবস্থান লক্ষ্যকরা যায় । কিন্তু এই বাড়িগুলাে কি উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল তা আজ আর কোন ক্রমেই জানার উপায় নেই । আর একটি রাস্তার ধারে দুই বা তিন কামরা বিশিষ্ট কয়েকটি বাড়ি দেখা যায় । এই জাতীয় বাড়িগুলােকে দোকান ঘর বলে অনুমান যায় করা হয় । সিন্ধু অববাহিকা অঞ্চলে রাস্তাঘাটের যে পরিকল্পনা দেখা যায় তা নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে যে সেখানে সুচিন্তিত নগর বিন্যাসের ব্যবস্থা ছিল ।
নগরের বসতবাটী নির্মাণের ক্ষেত্রেও পরিকল্পনা একটি বিশেষ স্থান অধিকার করত । সাধারণত রােদে পােড়ানাে ইটের উচু ভিতের ওপর শহরগুলাে নির্মিত হত । সাধারণত সিন্ধু নদের বন্যার প্রকোপ এবং অতি বৃষ্টির কবল থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় । শহরের প্রাসাদ ও অন্যান্য অট্টালিকাগুলাে আগুনে পােড়ানাে ইট দিয়ে তৈরি করা হত । নাগরিক সুখসুবিধার দিকে লক্ষ্য রেখেই বসতবাটীগুলাে তৈরি করা হত । সবচাইতে ছােট বাড়িগুলােতেও দুটি ঘর থাকত । তবে এই সব বাড়িতে দরজা জানলার আকার তুলনামূলকভাবে ছােট থাকত । সাধারণ নাগরিকদের বাড়ীতে বেশ কিছু সংখ্যক কামরা, রান্নাঘর , স্নানাগার ও আঙ্গিনা থাকত । প্রায় সব বাড়ির সঙ্গে সংলগ্ন আঙ্গিনা দেখা যায় । মানে সমকালীন গার্হস্থ্য জীবনে আঙ্গিনার বিশেষ প্রয়ােজনীয়তা ছিল । এইসব বাড়ির দরজা - জানলার আকার বড় ছিল এবং সাধারণত বাতাস চলাচলের জন্য ঋজু ঋজু জানলা -দরজা তৈরি করার প্রথা , প্রচলিত ছিল । কোন কোন বাড়িতে সিড়ির চিহ্ন দেখে যুক্তিসঙ্গতভাবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় যে , এইসব বাড়ি বহুতল বিশিষ্ট ছিল । অনেকে মনে করেন যে সিন্ধু অঞলে দুই - তিনতল বিশিষ্ট প্রচুর সংখ্যক বাড়ি ছিল এবং ধনী ব্যক্তিদের বাড়িগুলাে সাধারণত প্রশস্ত রাজপথের পাশে তৈরি হত এবং দরিদ্রদের বাড়িগুলাে সরুরাস্তা ও গলিপথের পাশে তৈরি হত ।
হরপ্পা সভ্যতার নগর জীবনের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযােগ্য দিক তার পয়ঃপ্রণালী ও জলনিকাশী ব্যবস্থা । জল -নিষ্কাষণের জন্য সব নগরীগুলােতেই ভূগর্ভস্থ পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা ছিল । এই পয়ঃপ্রণালীর সঙ্গে অনেক ক্ষুদ্রতর নালা যুক্ত থাকত যা দিয়ে প্রত্যেক বাড়ির জল নিষ্কাষিত হত । প্রত্যেক বাড়িতেই স্নানাগার ছাড়াও সর্বসাধারণের জন্য স্নানাগার থাকত । স্নানাগারের ব্যাপক ব্যবহারও নাগরিকদের পরিচ্ছন্নতাবােধ ও নাগরিকদের স্বাস্থ্যস চেতনতার ইঙ্গিত দেয় । জলনিষ্কাষণের উন্নত ব্যবস্থা শুধুমাত্র মহেঞ্জোদারাে অথবা হরপ্পাতেই নয় লােথাল এবং কলিবাঙানেও এই ব্যবস্থার যথেষ্ট নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায় । জলনিকাশী ব্যবস্থার এত ব্যাপক ও সার্বিক গুরুত্ব আরােপের নিদর্শন সমকালীন সভ্যতাগুলােতে দেখা যায় না ।
( ৩ ) শস্যাগার ও অন্যান্য অট্টালিকা : গঠনরীতি অনুসারে মহেঞ্জোদারাের অট্টালিকাগুলােকে তিন ভাগে বিভক্ত করা যায় । যথা — আবাসগৃহ , সর্বসাধারণের জন্য বা সরকারী কাজের জন্য গৃহ এবং সর্বসাধারণের জন্য স্নানাগার । এদের মধ্যে বৃহৎ শস্যাগারগুলাের কথা বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য । হরপ্পার আবিষ্কৃত শস্যাগারটি ইরাবতী নদীর তীরে শুষ্ক ও প্রাক্তন খাতের কাছে অবস্থিত । এই শস্যাগারটির আয়তন ১০০০ বর্গফুট । দুটি সারিতে শস্যাগারটি বিভক্ত এবং প্রতি সারিতে ছটি করে শস্য সংরক্ষণের মণ্ড দেখতে পাওয়া যায় । প্রতিটি মঞ্জু পঞ্চাশ ফুট দীর্ঘ এবং বিশ ফুট প্রস্থ । দুই মঞ্চের মাঝখানে তেইশ ফুট চাওড়া চলাচলের মূল পথটি তৈরি করা হয়েছিল । শস্যাগারের মধ্যে হাওয়া চলাচলের জন্য বাতাস প্রবেশ করার সুব্যবস্থা ছিল এবং এর দ্বারা শস্য শুষ্ক অবস্থায় রাখা সম্ভব হত ।
হরপ্পার শস্যাগারটির ঠিক দক্ষিণে একটি উচ্চ মঞ্চের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে । এই মঞ্চের মধ্যে কয়েকটি গোলাকার গর্ত দেখতে পাওয়া যায় । এই গর্ত গুলোর ব্যাস দশ ফুট নয় ইঞ্চি থেকে দশ ফুট এগারো ইঞ্চি । গর্ত গুলোর ভিতর থেকে খড় , তুষ , পোড়াগমের দানা খোসা ছাড়ানো যবের দানা প্রভৃতি আবিস্কৃত হয়েছে । মঞ্চে অবস্থিত গর্তগুলো যে শস্য ঝাড়াই মাড়াই করার জায়গা ছিল সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই । শস্যগারের সঙ্গে ফসল মাড়াই করার জায়গাটি সংলগ্ন থাকায় এই কাজের বিশেষ সুবিধা হত । মাড়াই করার জায়গার সঙ্গে যুক্ত দুইসারি প্রকোষ্ঠ দেখতে পাওয়া যায় । এই প্রকোষ্ঠগুলো এক কামরা বিশিষ্ট বাসস্থান । কখনও কখনও কামরার সঙ্গে যুক্ত আঙিনাও দেখতে পাওয়া যায় । এই কামরায় কারা বাস করত তা নিশ্চিতভাবে জানা নাগেলেও সেখানকার বসবাসকারীরা শহরের বড় বড় অট্টালিকা সমূহের বাসিন্দাদের তুলনায় যে দরিদ্রতর ছিল তা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে । অনেকে মনে করেন যে এই কামরা কুলি বা শ্রমিক শ্রেনীর বাসস্থান ছিল । এই দিক থেকে বিচার করলে শস্যগার , শস্যঝাড়াই মাড়াই করার মঞ্চ ও শ্রমিকদের বাসস্থান এই তিনের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক দেখা যায় এবং সমস্ত ব্যবস্থার মধ্যে বিন্যাস ও পরিকল্পনার ছাপ সুস্পষ্ট । অনেকে মনে করেন যে শস্যগারে আনিত শস্য সম্ভবত রাজস্ব হিসাবে গ্রহণ করা হত । স্টুয়ার্ট গিপট, মটিমার হুইলার প্রমুখ পুরাতত্ত্ববিদগণ মনে করেন যে হরপ্পার শস্যগারটি আধুনিক কালের ব্যাঙ্কের মতো শস্য লেনদেন করত । মহেঞ্জোদারো তে যে শস্যগারটি আবিষ্কৃত হয়েছে তা আয়তনে হরপ্পার শস্যগারটি সঙ্গে যথেষ্ট সাদৃশ্যপূর্ন । চারশ মাইল দূরে অবস্থিত হলেও এই দুটি শহরের শস্যগারের আয়তনের অভিন্নতা অর্থনৈতিক জীবন নিয়ন্ত্রণের ছাপ বহন করে ।
মহেঞ্জোদারোতে আবিষ্কৃত বিরাট শস্যগারটি ছাড়াও সেখাকার বৌদ্ধস্তূপের কাছে একটি বিশাল অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে । পুরাতত্ত্ববিদগণের মতে এই অট্টালিকা পুরোহিতদের জন্য সংরক্ষিত ছিল । এই অট্টালিকার মধ্যে একটি বিশাল বর্গাকৃতি কামরা দেখতে পাওয়া যায় । কামড়াটির আয়তন ৮০ × ৮০ ফুট । কামড়াটি খিলান যুক্ত এবং সারিবদ্ধ ভাবে বসার আসনের চিহ্ন ও সেখানে আবিষ্কৃত হয়েছে । পন্ডিতগণ মনে করেন যে এই কামরা টি প্রকৃত পক্ষে একটি সভাগৃহ এবং সেখানে বহু মানুষ সমবেত হত ।
( ৪ ) অন্যান্য নির্দশন : মহেঞ্জোদারোতে আরও একটি বৃহদাকার অট্টালিকার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে । এটি দৈঘে ছিল আড়াইশ ফুট । কোন কোন প্রত্নতাত্ত্বিক এটিকে রাজা বা অন্য কোন শাসকের প্রাসাদ বলে মনে করেন । কিন্তু মহেঞ্জোদারো বা হরপ্পার শাসকগোষ্ঠী সম্পর্কে নির্দিষ্ট ভাবে কিছু বলা যায় না । সুতরাং এই ইমারতটিকে নির্দিষ্ট কোন রাজপ্রসাদ হিসাবে চিহ্নিত করা যুক্তিযুক্ত হবে না ।
এই প্রসঙ্গে মহেঞ্জোদারো বৃহৎ স্নানাগারটির কথাও উল্লেখ করা প্রয়োজন । এই স্নানাগারটির দৈঘ ছিল ৩৯ ফুট এবং প্রস্থে ২৩ ফুট । উত্তর দিকের সিঁড়ি দিয়ে জলাশয়ের পাশে ছিল কয়েক সারি ঘর । স্নানাগারটির জল সরবরাহ হত নিকটস্থ একটি পুকুর থেকে । আবার স্নানাগারের হল নিষ্কাশনের জন্যেও আলাদা একটি বড় প্রণালী ছিল । অনেকে মনে করেন যে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে সম্ভবত এই স্নানাগারটির যুক্ত ছিল ।
( ৫ ) পরিকল্পনাগত তলটি : হরপ্পা অঞ্চলের সমস্ত নগরী গুলোই পরিকল্পিত ভাবে গঠিত হলেও এই পরিকল্পনার মৌলিক ত্রুটির কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন । হরপ্পা সংস্কৃতির স্রষ্টাগণ
খুব শিল্পরুচি সম্পন্ন ছিল না । শিল্পের জন্য শিল্প এই নীতিতে তারা আদৌ বিশ্বাসী ছিল না । তাদের নগর পরিকল্পনা এবং গৃহনির্মাণের মূললক্ষ্য ছিল প্রয়ােজন মেটানাে , চারুশিল্প বা সৌন্দর্য সৃষ্টি নয় । তাদের বাড়িঘর এমনকি অট্টালিকাতেও অঙ্গসজ্জা বা অলঙ্করণের কোন চিহ্ন পাওয়া যায় না । কঠোর আত্মসংযম ছিল তাদের স্থাপত্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য আর উপযােগিতা ছিল তাদের নগর পরিকল্পনার প্রধান লক্ষ্য । সেজন্যই কোন বিশেষ নগরের পরিকল্পনার মধ্যে কোন বৈচিত্র্য খুজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব । নগর পরিকল্পনার এই সরলতা স্থানীয় অধিবাসীদের জীবনযাত্রার সারল্যের পরিচয় বহন করে ।
( ৬ ) ধ্বংসের কারণ : সিন্ধু সভ্যতা ধবংসের কারণ সম্পর্কে পন্ডিতদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা যায় । সম্ভবত সিন্ধুনদের গতিপথ পরিবর্তন , মরুভূমির আগ্রাসন , জলবায়ুর পরিবর্তন স্থানীয় অধিবাসীদের রক্ষণশীলতা ধীরে ধীরে সিন্ধু সভ্যতাকে দুর্বল করে তুলতে থাকে । এরুপ পরিস্থিতিতে কোন বিদেশী শক্তির সম্ভবত আর্যদের আক্রমণ সিন্ধু সভ্যতার পতন ত্বরান্বিত করে । প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন থেকেই এই মত সমর্থিত হয় ।