সুফিবাদের উৎপত্তি সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখাে ।

অনাস পাস ইতিহাস honours pass general history questions answers প্রশ্নোত্তর সুফিবাদের উৎপত্তি সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখাে sufibader utpotti somporke akti songkhipto tika lekho


উত্তর : সুলতানী যুগে ভারতে হিন্দু ও মুসলিম ধর্ম ও সংস্কৃতির সমন্বয়ের ফলে হিন্দুধর্মের যেমন ভক্তিবাদের সৃষ্টি হয়েছিল , ইসলাম ধর্মেও তেমনি উদ্ভব হয়েছিল ‘সুফিবাদ’ । সুফিবাদের উদ্ভব অবশ্য সুলতানী যুগের আগেই হয়েছিল । আরব শাসনের সময় থেকেই পাঞ্জাব ও নিকটবর্তী অঞ্চলে সুফিবাদ - এর অস্তিত্বের কথা জানা যায় । সুলতানী শাসনকালে ইসলামী জগতের বিভিন্ন স্থান থেকে সুফিরা ভারতে ব্যাপক সংখ্যায় এলে ভারতে এই মতবাদের প্রসার হয় । 


সুফিরা ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে প্রেমময় সম্পর্কের কথা বলতেন । এই প্রেমধর্ম পালনের জন্য গুরু বা পীরের পথ নির্দেশ প্রয়ােজন ছিল । সুফিরা সকল শ্রেণির মানুষের সঙ্গে অবাধ মেলামেশা করতেন এবং সাধারণ মানুষের ভাষা ব্যবহার করতেন । তাঁদের জীবন ছিল সরল, অনাড়ম্বর । প্রচলিত ইসলাম ধর্মের রক্ষণশীলতা ও আচার - আড়ম্বরের তাঁরা বিরােধী ছিলেন, ভারতে সুফিরা অনেক হিন্দুদের আচার - অনুষ্ঠান, রীতি - নীতিকে গ্রহণ করেছিলেন । তারা ছিলেন মরমিয়া সাধক । তারা বিশ্বাস করতেন , আচার - অনুষ্ঠান নয়, প্রেম ও ভক্তির দ্বারাই ঈশ্বর লাভ করা সম্ভব । শুধু নিজেদের আধ্যাত্মিক উন্নতি নয়, সমগ্র মানবজাতির কল্যাণ ছিল তাদের লক্ষ্য । 



ভারতে সুফি সাধকদের মধ্যে খাজা মইনুদ্দিন চিস্তি-র নাম বিশেষ উল্লেখযােগ্য । ১১৬১ খ্রিস্টাব্দে গজনী থেকে ভারতে এসে তিনি আজমীরে বসবাস করেন । তাঁর শিষ্যরা ‘চিন্তি সম্প্রদায়’ নামে পরিচিত । আজমীরে তার দরগায় হিন্দু ও মুসলমানরা আজও সমভাবে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে । চিস্তি সম্প্রদায়ের গুরুরা দারিদ্র্য ব্রতও পবিত্র নৈতিক জীবন -যাপনের ওপর জোর দিতেন । তারা যা দান পেতেন , তার দ্বারাই জীবনযাত্রা চালাতেন । অতিরিক্ত অর্থ যা পেতেন দরিদ্রদের তা বিতরণ করে দিতেন । তারা যােগাভ্যাস করতেন এবং অনেকে বছরে চল্লিশ দিন গুহাতে যােগসাধনা করতেন । তারা ‘সমা’ গানে পারদর্শী ছিলেন । 

 

নিজামউদ্দিন আউলিয়া ছিলেন আর একজন সুফি সাধক । তিনি আফগানিস্থান থেকে এসে দিল্লিতে বসবাস করেন । পাণ্ডিত্য , পরধর্মমত সহিষ্ণুতার জন্য সকলের অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা অর্জন করেছিলেন । সুলতান আলাউদ্দিন খলজি ও কবি আমির খসরু তার শিষ্য ছিলেন । পাঞ্জাব , সিন্ধু , মুলতান ও বাংলায় সুরাবর্দী সম্প্রদায়ের মধ্যে সুফিদের প্রভাব বেশি ছিল । সুরাবর্দী সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আরব দেশে শেখ শিখাবুদ্দিন সুরাবর্দী আর ভারতে এই সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন শেখ বাহাউদ্দিন । এরা ইসলামে ধর্মান্তরকরণের জন্য উৎসাহ দেখান । 


কালক্রমে সুফিরা কয়েকটি সম্প্রদায়ে বা ‘সিলসিলা’ - য় বিভক্ত হয় । ফজল আবুজ ভারতে মােট ১৪ টি সিলসিলা - র কথা উল্লেখ করেছেন । এদের মধ্যে চিস্তি, আউলিয়া , ফিরদৌসী ,কাদিরী, নকশবন্দী প্রভৃতি সিলসিলা উল্লেখযােগ্য । 

 
 
মধ্যযুগীয় সমাজব্যবস্থা রূপায়ণের ক্ষেত্রে সুফীবাদ একটি সামাজিক শক্তি হিসাবে কাজ করছিল । তাই কোনাে বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায় নয় , সকল শ্রেণি ও স্তরের মানুষ সুফীবাদের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে সামাজিক সাম্য ও সহনশীলতার শিক্ষা নিয়েছিল ।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন