বৈদেশি পর্যটকদের বিবরণ থেকে মুঘল যুগে ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে কী জানা যায় ?

অনাস পাস ইতিহাস honours pass general history questions answers প্রশ্নোত্তর বৈদেশি পর্যটকদের বিবরণ থেকে মুঘল যুগে ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে কী জানা যায় boideshik porjotokder biborno theke mughol juge bharoter orthonoitik abostha somporke ki jana jai


উত্তর : মােগল যুগে সমসাময়িক ঐতিহাসিকদের দ্বারা যে ইতিহাস রচিত হয়েছিল তা প্রধানত রাজা ও সম্রাটদের যুদ্ধবিগ্রহ এবং ব্যক্তিগত জীবনের ইতিহাস । জনগণের জীবনযাত্রা এই রচনাগুলিতে তেমন স্থান পায়নি । সমকালীন পারসিক গ্রন্থ এবং ইউরােপীয় বণিকদে বিবরণ থেকে ভারতের ঐশ্বর্য ও সমৃদ্ধির পরিচয় পাওয়া যায় । জাহাঙ্গীরের সময়ের ইংরেজ রাজদূত হকিন্স রাজসভার ঐশ্বর্য ও আড়ম্বর দেখে চমৎকৃত হয়েছিলেন । 


সমৃদ্ধশালী নগর : স্যার টমাস্ রাে -এর মতে সম্রাটের আয় সমসাময়িক যুগের তুরস্ক বা পারস্য রাজ্যের আয় অপেক্ষা বহুগুণ বেশি ছিল । মনসেরেট লাহােরকে এশিয়া ও ইউরােপের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শহর বলে বর্ণনা করেছেন । ইংরেজ পর্যটক রালফ ফিজ আগ্রা ও ফতেপুর সিক্রীকে লণ্ডন অপেক্ষাও আয়তনে বৃহৎ ও জনবহুল বলে বর্ণনা করেছিলেন । 



কৃষিজাত দ্রব্য : মােগল যুগে কৃষিই ছিল দেশবাসীর প্রধান উপজীবিকা । প্রধান খাদ্যশস্য ব্যতীত দেশের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন প্রকারের কৃষিজাত দ্রব্য দেখা যেত । বাংলা ও বিহারে ইক্ষু চাষ হত খুব বেশি ।রেশম ,তুলা ও তামাকও বহু স্থানে উৎপাদিত হত । পেলসার্টের বর্ণনা থেকে জানা যায় যে , যমুনা নদীর উপত্যকায় ও মধ্য -ভারতে নীলের বহু চাষ ছিল । আবুল ফজলের ‘ আইন -ই - আকবরী’তে ষোল রকমের রবিশস্য এবং পঁচিশ রকমের খারিফ শস্যের উল্লেখ পাওয়া যায় । দুঃখের বিষয় , মুঘল শাসনে কৃষি উৎপাদনের বৈচিত্র্য সত্ত্বেও কৃষির সম্প্রসারণ ঘটেনি । অনাবৃষ্টি ও অতিবৃষ্টির দরুণ কৃষির উৎপাদন ব্যাহত হয় । 
 

শিল্পোৎপাদন : মােগল যুগে ভারতের শিল্পোৎপাদন বেশ বৃদ্ধি লাভ করেছিল । এই সমত শিল্পোৎপাদিত সামগ্রী দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাইরেও রপ্তানি হত । মােগল আমলে সরকারের পরিচালনাধীনে কিছু কিছু শিল্পোৎপাদনের ব্যবস্থা ছিল, বার্ণিয়ের বর্ণনাতেও এর উল্লেখ আছে ।  সরকারি কারখানাগুলিতেও সােনার কাজ , রেশমের কাজ ও সূচের কাজ প্রভৃতি থেকে বিভিন্ন  জিনিসপত্র প্রস্তুত হত । বস্ত্রশিল্প , ছিল ভারতের অন্যতম প্রধানশিল্প । বারাণসী , গুজরাট , আগ্রা এবং বাংলাদেশ প্রভৃতি স্থান বস্ত্র উৎপাদনের জন্য ছিল । ঢাকাই মসলিন ছিল জগৎবিখ্যাত এবং দেশ - দেশান্তরে তা রপ্তানি হত । লাহাের ও কাশ্মীর ছিল শাল ও বাগিচার জন্য প্রসিদ্ধ । বিহার ছিল চিনি ও সােরা উৎপাদনের কেন্দ্র । এই সময়ে রঞ্জন শিল্পেরও যথেষ্ট উন্নতি হয়েছিল ।  



উপসংহার :  মােগল যুগে ভারতের ঐশ্বর্য ও সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছিল ঠিকই তবে এই যুগের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল উৎপাদনকারী ও ব্যবহারকারী জনগণের মধ্যে বিস্ময়কর ধনবৈষম্য । উৎপাদনকারী সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষিজীবী ছিল দারিদ্র্যভাবে জর্জরিত ,অন্যদিকে আভিজাতবর্গ ও উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারীগণ বিলাসব্যসনে দিন কাটাত ।

 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন