উত্তর : বাংলা তথা ভারতের ইতিহাসে বক্সারের যুদ্ধ ( ১৭৬৪ খ্রিঃ ) ছিল খুবই গুরত্বপূর্ণ । বাংলার নবাব মিরকাশিম , অযােধ্যায় নবাব সুজাউদ্দৌলা ও মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের মধ্যে গড়ে ওঠা জোটের সঙ্গে ইংরেজ বাহিনীর যে যুদ্ধ হয়েছিল তা বক্সারের যুদ্ধ নামে পরিচিত ।
ঐতিহাসিক বিতর্ক : ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথের মতে , “পলাশির ছিল কয়েকটি কামানের লড়াই । বক্সার ছিল চূড়ান্ত বিজয়” । ঐতিহাসিক বিপান চন্দ্র বক্সারের যুদ্ধকে সর্বাধিক যুগান্তকারী ও তাৎপর্যময় বলে উল্লেখ করেছেন ।
বক্সারের যুদ্ধের গুরুত্ব : বক্সারের যুদ্ধের গুরুত্বগুলি হল —
প্রথমত । ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শক্তি প্রতিষ্ঠার দিক দিয়ে বিচার করলে পলাশির যুদ্ধের চেয়ে বক্সারের যুদ্ধ ছিল অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ । পলাশিতে প্রকৃত যুদ্ধই হয়নি , কিন্তু বক্সারে তা হয়েছিল । কারণ বক্সারের যুদ্ধে ইংরজেরা কেবলমাত্র বাংলার নবাবকেই নয় , অযােধ্যার নবাব ও দিল্লির সম্রাটকেও পরাস্ত করেছিল ।
দ্বিতীয়ত । এর ফলে বাংলার শেষ পরাক্রান্ত নবাব মিরকাশিম সিংহাসনচ্যুত হন এবং ইংরেজদের ক্রীড়নকরূপে মিরজাফর পুনরায় নবাব হন ।
তৃতীয়ত । অযােধ্যার নবাবের ক্ষমতা হ্রাস করা হয় এবং তার রাজ্যে কোম্পানির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় ।
চতুর্থত । বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভের ফলে বাংলার বাণিজ্য ও অর্থনীতির ওপর কোম্পানির একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয় ।
পঞ্চমত । বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভের ফলে বাংলা , বিহার ও উড়িষ্যার ইংরেজ কোম্পানির রাজনৈতিক ক্ষমতার ভিত্তি সুনিশ্চিত হয় । এর ফলে ক্লাইভের পক্ষে বাংলা - বিহার - উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ সম্ভব হয়েছিল ।
উপসংহার : উপরােক্ত আলােচনা থেকে দেখা যায় যে , বক্সার যুদ্ধের পর থেকে ইংরেজদেরকে তাদের অস্তিত্ব বজায় রাখবার জন্য আর যুদ্ধ করতে হয়নি । এরপর তারা যুদ্ধ করেছে সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য । এইভাবে দেখা যায় যে , পলাশীর যুদ্ধের চেয়ে বক্সারের যুদ্ধই অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ।