হায়দার আলির সঙ্গে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সম্পর্ক আলােচনা করাে ।

Clg history questions answers কলেজ প্রশ্নোত্তর হায়দার আলির সঙ্গে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সম্পর্ক আলােচনা করাে haidar alir songhe ingrej east indian companyr somporko alochona koro


উত্তর : অষ্টাদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের সূচনায় হায়দার আলি ছিলেন মহীশূরের প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান সেনাপতি নঞ্জরাজের এক সামান্য নায়েব । হায়দার আলি বিশৃঙ্খলার সুযােগ গ্রহণ করে নিজ কৃতিত্বের জোরে নঞ্জরাজকে অপসারণ করে মহীশূর রাজ্যের সমস্ত ক্ষমতা দখল করেন ( ১৭৬১ ) ও মহীশূরের রাজাকে তার ক্রীড়নকে পরিণত করেন । রাজার মৃত্যু হলে তিনি নিজে রাজা হন এবং রাজ্যবিস্তারে সচেষ্ট হন । 


হায়দারের সঙ্গে ইংরেজদের সম্পর্ক : হায়দারের নেতৃত্বে মহীশূর রাজ্যের উত্থান মারাঠা , নিজাম বা ইংরেজ কেউই প্রীতির চোখে দেখতে পারেনি । তাই ইংরেজ কোম্পানি মারাঠা , নিজামের সঙ্গে একটি জোট গড়ে তােলে । এককভাবে এই জোটের সঙ্গে যুদ্ধ সম্ভব নয় , বুঝে হায়দার প্রচুর অর্থ দিয়ে মারাঠাদের নিরস্ত্র করেন । নিজামকেও কৌশলে ইংরেজপক্ষ ত্যাগ করতে রাজি করেন । 

প্রথম ইঙ্গ - মহীশূর যুদ্ধ : মাদ্রাজের ইংরেজ সরকার একইভাবেই হায়দারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে । এরপর ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দে হায়দার মাদ্রাজ আক্রমণ করলে ইংরেজরা মাদ্রাজের - এর সঙ্গে সন্ধি করতে বাধ্য হয় । এই সন্ধির শর্ত অনুসারে ( ১ ) উভয়পক্ষই পরস্পরের বিজিত স্থান ও যুদ্ধবন্দী প্রত্যর্পণ করে । ( ২ ) মহীশূর রাজ্য অপর কোনাে শক্তি দ্বারা আক্রান্ত হলে ইংরেজরা সৈন্য দিয়ে তাকে সাহায্য করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয় । এই শেষােক্ত শর্তের জন্য হায়দার যুদ্ধে জয়লাভ করেও ইংরেজদের কাছে কোনাে কিছু দাবি করেননি । কিন্তু তিনি তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে বুঝতে পেরেছিলেন যে , ইংরেজদের প্রতিশ্রুতির কোনাে মূল্য নেই । 



দ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ : অল্পকালের মধ্যেই মারাঠারা মহীশূর আক্রমণ করলে ইংরেজরা পূর্ব প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে নিরপেক্ষ থাকে । এরূপ বিশ্বাসঘাতকতায় হায়দার ইংরেজদের ওপর ক্রুদ্ধ হন । এরপর কয়েক বছরের মধ্যেই আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধকে উপলক্ষ করে ইংরেজ ও ফরাসিদের মধ্যে যুদ্ধ বাধলে ইংরেজরা ভারতস্থ ফরাসি উপনিবেশগুলি দখল করতে আরম্ভ করে এবং মাহে , অধিকার করে । মাহে বন্দরটি হায়দারের রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় তিনি এর তীব্র প্রতিবাদ করেন । ইংরেজরা এই প্রতিবাদে কর্ণপাত না করলে হায়দার নিজাম ও মারাঠাদের সঙ্গে এক শক্তিসংঘ গঠন করেন এবং ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজদের বিরুদ্ধে অপূর্ণ হন । তিনি প্রচণ্ড বিক্রমে ইংরেজ বাহিনীকে আক্রমণ ও পরাজিত করে আর্কট দখল করেন । দাক্ষিণাত্যের ইংরেজদের এই শােচনীয় অবস্থা থেকে রক্ষা করবার জন্য ওয়ারেন হেস্টিংস বাংলা থেকে বিরাট বাহিনী পাঠান , এই বাহিনী সুকৌশলে মারাঠা ও নিজাম থেকে হায়দারকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে । হায়দার এককভাবে যুদ্ধ চালিয়ে যান । এই সময়ে অকথাৎ ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে হায়দারের মৃত্যু হয় । 
 

উপসংহার : ইংরেজদের সঙ্গে সংঘর্ষে অবতীর্ণ হয়ে হায়দার নিজস্ব সামরিক ও কুটনৈতিক দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন । তিনি ছিলেন একজন সুযােগ্য সৈনিক ও সুচতুর কূটনীতিবিদ । তিনি কখনাে বিচ্ছিন্নভাবে ইংরেজদের সঙ্গে সংঘর্ষে নামেননি । এছাড়া হায়দার যতদিন জীবিত ছিলেন ততদিন ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে সাফল্য অর্জন করেছিলেন । কিন্তু তার পুত্র টিপু সুলতানের সময়কালে মহীশূর রাজ্য সংকটের আবর্তে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল ।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন