উত্তর : রাওলাট আইন বিরােধী আন্দোলন গান্ধীজির সাংগঠনিক প্রতিভার প্রমাণ দেয় এই সময় থেকে তিনি জাতীয় আন্দোলনের শীর্ষ নেতা হিসাবে স্বীকৃতি পান । ভারতের জাতীয় আন্দোলনকে সুদৃঢ় করার ক্ষেত্রে হিন্দু ও মুসলমানদের ঐক্যের গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি যথেষ্ট সচেতন ছিলেন ।
কারণ : প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালে তুরস্ক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জার্মানির সাথে যােগ দিয়েছিল । বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পর মিত্রশক্তি তুরস্ক সাম্রাজ্যকে ভেঙে দেয় । তুর্কি সুলতান ‘খলিফা’ বা ধর্মগুরু হিসাবে সমস্ত মুসলমানের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন । এই ঘটনায় বিশ্ব তথা ভারতের মুসলমান সমাজ ক্ষুব্ধ হন ।
খিলাফৎ আন্দোলনের দাবি : খিলাফৎ আন্দোলনের তিনটি প্রধান দাবি ছিল ( ১ ) খলিফার পার্থিব সাম্রাজ্য অটুট রাখা ( ২ ) আরব , সিরিয়া , প্যালেস্টাইন ও মেসােপটেমিয়ার উপর খলিভার কর্তৃত্ব অটুট রাখা । ( ৩ ) পবিত্র মক্কা ও মদিনার উপর বিদেশি হস্তক্ষেপ বন্ধ করা ( ৪ ) প্রথমদিকে সভাসমিতি , স্মারকলিপি ও জনমত গঠনের দ্বারা আন্দোলন চলতে থাকে । অক্টোবর মাসে ( ১৯ অক্টোবর ১৯১৯ ) ‘খিলাফৎ দিবস’ পালন করা হয় ।
ভারতের জাতীয় সংগ্রামের ইতিহাকে খিলাফৎ আন্দোলন যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ । ( ১ ) এই আন্দোলন গান্ধীজির ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে । ( ২ ) এই আন্দোলনের মাধ্যমে হিন্দু ও মুসলমান নির্বিশেষে সারা ভারতের নেতারা মর্যাদা পান । ( ৩ ) ইংরেজ শাসনের প্রতি মুসলিম সমাজের মােহভঙ্গ ঘটাতে এই আন্দোলন অনেকটাই সফল হয়েছিল ( ৪ ) কিন্তু জুডিথ ব্রাউন মনে করেন , খিলাফৎ আন্দোলনে গান্ধীজির তত্ত্ব সঠিক ছিল না । যে ধর্মের ভিত্তিতে তিনি হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন , সেটাই শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে গিয়েছিল । কেননা ১৯২২ খ্রিঃ মুস্তফা কামাল পাশা তুরস্কের শাসনক্ষমতা দখল করে এবং খলিফা তন্ত্রের অবসান ঘটান । তবুও বলতে হয় ভারতের জাতীয় আন্দোলনকে ঐক্যবদ্ধতার রূপ দিতে খলিফা আন্দোলন অনেকাংশে দায়ী ।