সম্রাট অশােকের জীবনী ও কার্যাবলী আলােচনা কর ।

অনাস পাস ইতিহাস honours pass general history questions answers প্রশ্নোত্তর সম্রাট অশােকের জীবনী ও কার্যাবলী আলােচনা কর samrat ashoker jiboni o karjaboli alochona koro questions answers


উত্তর : ( ১) অশােকের রাজত্বকালের ঐতিহাসিক উপাদান : প্রাচীন ভারতের ইতিহাস গঠনের  উপাদান সংগ্রহ অধিকাংশ ক্ষেত্রে দুঃসাধ্য ব্যাপার হলেও । সম্রাট অশােকের অনুশাসনগুলাে আবিষ্কার হওয়ায় এই অভাব অনেকাংশে দূর হয়েছে । সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে তিনি যে সব স্তম্ভলেখ ও শিলালেখ উৎকীর্ণ করেছিলেন তা থেকে তার রাজ্যশাসন সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য জানা যায় । অশােকের চৌদ্দটি প্রধান শিলালেখ , দুটি কলিঙ্গলেখ সাতটি স্তম্ভলেখ  ছাড়াও তিনটি অপ্রধান শিলালেখ আবিষ্কৃত হয়েছে । তাছাড়া ‘মহাবংশ’ , ‘দীপবংশ’ , ‘দিব্যাবদান’ ‘অশােকাবদান’ প্রভৃতি বৌদ্ধগ্রন্থ থেকে সম্রাট অশােকের রাজত্বের বিবরণ পাওয়া যায় ।


( ২ ) অশােকের সিংহাসনলাভ : চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের পৌত্র ও বিন্দুসারের পুত্র অশােক । খ্রিস্টপূর্ব ২৭৩ মতান্তরে ২৭২ অব্দে মগধের সিংহাসনে আরােহন করেন । তিনি প্রায় চল্লিশ বছর রাজত্ব করেন ।পিতামহ ও পিতার দৃষ্টান্ত অনুসারণ করে তিনি দেবানাম প্রিয় প্রিয়দর্শী ( দেবানাম পিয় পিয়দসি ) উপাধি গ্রহণ করেন । অশােকের সিংহাসন  আরােহন   
ভারতের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা । সিংহাসনে আরােহন করেই তিনি পিতা ও পিতামহের নীতি অনুসরণ করে রাজ্য বিস্তারের চেষ্টা করেন । ২৬১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সম্রাট অশােক কলিঙ্গরাজ্য ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল জয় করার জন্য অগ্রসর হন । মৌর্য সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা সুরক্ষিত করার জন্য অশােক কলিঙ্গ জয় করতে আগ্রহী হন । তবে অনেকে মনে করেন যে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রাখার জন্যই কলিঙ্গের ওপর মৌর্যদের কর্তৃত্ব স্থাপন করার প্রয়ােজন দেখা দিয়েছিল । তবে কলিঙ্গের বিরুদ্ধেই অশােকের প্রথম ও শেষ যুদ্ধযাত্রা । কলিঙ্গের সাহসী সমরকুশলী অধিবাসীরা দেশের স্বাধীনতার জন্য প্রাণপনে যুদ্ধ করে কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা পরাজয় স্বীকার করতে বাধ্য হয় । 

 

( ৩ ) কলিঙ্গ যুদ্ধের পর অশােকের পরিবর্তন : অশােকের ত্রয়ােদশ শিলালিপিতে কলিঙ্গযুদ্ধের বিবরণ উল্লিখিত আছে । এই যুদ্ধে প্রায় দেড়লক্ষ কলিঙ্গবাসী বন্দী হয় এবং একলক্ষ নিহত এবং কয়েকলক্ষ আহতকে শেষ পর্যন্ত মৃত্যু বরণ করতে হয় । কিন্তু যুদ্ধের হত্যাকাণ্ড , রক্তস্রোত ও কলিঙ্গবাসীদের দুর্দশা সম্রাট অশােককে গভীর দুঃখ, বেদনা ও অনুশােচনায় পূর্ণ করে আর তার ফলেই অশােকের চরিত্রে আমূল পরিবর্তন দেখা দেয় । তিনি চিরকালের জন্য অস্ত্র ত্যাগ করেন এবং অস্ত্রের পরিবর্তে হৃদয় বলে সারা ভারত তথা বহির্বিশ্বের সকলকে আপন করার সঙ্কল্প গ্রহণ করেন । অস্ত্রবলে দিগ্বিজয় করার নীতি ত্যাগ করে তিনি ধর্মবিজয়ের পথ গ্রহণ করেন । কলিঙ্গযুদ্ধের পূর্বে অশােক ছিলেন শিবভক্ত তখন তিনি উপগুপ্ত নামে এক বৌদ্ধ ভিক্ষুর নিকট বৌদ্ধধর্মে দীক্ষাগ্রহণ করেন । এর ফলে বিম্বিসারের আমল থেকে মগধে যে সম্প্রসারণের নীতির সূত্রপাত হয়েছিল মগধ তথা ভারতের ইতিহাসের এক যুগান্তকারী ঘটনা । মৌর্য সম্রাটদের যুদ্ধনীতি বা দিগ্বিজয় নীতির পরিবর্তন সাধন করে অশােক শান্তি, মৈত্রী ও সৌহার্দের নীতি অনুসরণ করেন । এই সময় থেকেই ধর্মঘােষ অর্থাৎ ধর্মডঙ্কা ভেরীঘােষ অর্থাৎ রণডঙ্কার স্থান গ্রহণ করে । কলিঙ্গ যুদ্ধের কিছু দিন পরেই অশােক দুটি কলিঙ্গ লেখা প্রকাশ করেন । এর একটিতে তিনি ঘােষণা করেন । “ সকল মানুষই আমার সন্তান ” (সবে মুনিসে পজা মমা ) পূর্বসূরীদের অনুসৃত কৌটিল্যের রাজনৈতিক দর্শনের পরিবর্তে শাক্য মুনির দ্বারা অনুপ্রাণিত নতুন রাজ্যশাসন পদ্ধতি গৃহীত হয় এবং এক নতুন শান্তি মৈত্রী ও প্রগতি যুগের আবির্ভাব হয় । অধ্যাপক রাধাকুমুদ মুখােপাধ্যায় মন্তব্য করেন যে কলিঙ্গ যুদ্ধের শােচনীয় পরিণাম অশােকের ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় জীবনে রূপান্তর ঘটিয়ে ছিল । 


( ৪ ) অশােকের ধর্মমত : অশােকের ব্যক্তিগত ধর্মমত নিঃসন্দেহে বৌদ্ধধর্ম ছিল । কিন্তু তিনি বিভিন্ন শিলালিপিতে জনসাধারণের কাছে যে ধর্মমত প্রচার করেন তা বৌদ্ধধর্ম কিনা এসম্পর্কে যথেষ্ট সন্দেহ আছে । কারণ বৌদ্ধধর্মের প্রধান অনুশাসনগুলাে যথা আর্যসত্য , নির্বাণ , অষ্টাঙ্গিক মার্গ । কার্যকারণ সম্পর্ক প্রভৃতির উল্লেখ অশােকের কোন লিপিতে দেখা যায় না । তাছাড়া অশােক বুদ্ধ , ধর্ম ও সঘের প্রতি আস্থা জানাতে বলেনি । এমন কি অশােক তার প্রচারিত ধর্মের নাম কখনও বৌদ্ধধর্ম বলে উল্লেখ করেনি । মাস্কি লিপিতেই তিনি ‘ধর্ম’ বলতে পালিভাষার ‘ধম্ম’ শব্দটি ব্যবহার করেন । পরবর্তী লিপিগুলােতে তার কোন ব্যতিক্রম হয় নি । 

 
অধিকাংশ পণ্ডিতের মতে অশােক যে ধর্ম ( ধম্ম )প্রচার করেন তা ছিল প্রধানত নীতিমূলক । সবল ধর্ম সম্পর্কেই তিনি ছিলেন শ্রদ্ধাশীল ।দ্বিতীয় স্তম্ভ লিপিতে অশােক তার ধর্মনীতি ব্যাখ্যা করে বলেন , পাপের স্বল্পতা , কল্যাণ কর্মের প্রাচুর্য , দয়া , সত্য ও শৌচ প্রভৃতিই ধর্ম । প্রকৃত পক্ষে অশােক যে নীতিগুলাে প্রচার করে ছিলেন তা সমস্ত ধর্মেরই সার কথা ।


এই সব কারণে অশােকের ধর্মকে কোন বিশিষ্ট ধর্ম না বলে কেবলমাত্র কর্তব্য কর্মের নীতি বলাই অধিকতর যুক্তিযুক্ত । ডক্টর রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে অশােক প্রকৃতপক্ষে ধর্মের নামে কতকগুলাে নৈতিক অনুশাসন প্রচার করেছিলেন । ঐতিহাসিক রােমিলা থাপার মনে করেন যে অশােকের ধর্মের মূললক্ষ্য ছিল মানুষের মনে সামাজিক দায়িত্ববােধ ও সচেতনতা জাগ্রত করে তােলা । বিভিন্ন জাতি ও ধর্মাবলম্বীদের দ্বারা গঠিত বিশাল সাম্রাজ্যের মধ্যে ঐক্য স্থাপনের জন্য তিনি ধর্মীয় সহিষ্ণুতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন । মানবতাবাদী সমাজ গঠনই ছিল অশােকের ধর্মীয় কার্যকলাপের মর্মবাণী । সম্রাট অশােক তার দ্বাদশ শিলালিপিতে উল্লেখ করেছেন যে , “ সমন্বয় ভাবই সাধু যার ফলে লােকেরা অন্যান্য ধর্মকথা শুনবে এবং পরস্পরের ধর্মনীতিকে সম্মান করবে ।” কিন্তু একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, অশােক বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত হয়ে ছিলেন এবং বৌদ্ধ সঙ্ঘের সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন এবং তার প্রচলিত নীতির ওপর বৌদ্ধধর্মের প্রভাব ছিল খুবই গভীর । কিন্তু সম্ভবত সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য সাধনের জন্যই অশােক তার ধর্মকে অধিকতর উদার বাস্তবধর্মী এবং মানবতাবাদী করে তুলেছিলেন । সংক্ষেপে বলা যায় যে , অহিংসা ও পরধর্ম সহিষ্ণুতা ছিল তার প্রচারিত ধম্মের মূলনীতি । 


( ৫ ) অশােকের ধর্মপ্রচার : অশােকের বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা গ্রহণ ভারতের তথা বিশ্বের ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করে । তিনি কেবলমাত্র বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করে সন্তুষ্ট হতে পারেন নি , সকল মানুষের নিকট তিনি এই ধর্মপ্রচারের জন্য সম্পূর্ণভাবে আত্মনিয়ােগ করেন । তার এই উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য তিনি কয়েকটি নির্দিষ্ট নীতি গ্রহণ করেন । তিনি প্রথমেই নিজের জীবনকে বৌদ্ধধর্মের আদর্শ অনুসারে গড়ে তােলেন । তিনি রাজ্যমধ্যে প্রাণীহত্যা বর্জন ও জীবের প্রতি জিঘাংসা নিবারণের নির্দেশ দেন । তাঁর এই নির্দেশ রাজপরিবারের ক্ষেত্রেও প্রযােজ্য ছিল । তারপর স্বয়ং বিহারযাত্রা অর্থাৎ মৃগয়া ও অন্যান্য আমােদ প্রমােদের পরিবর্তে ধর্মাত্রা অর্থাৎ বৌদ্ধ তীর্থস্থানগুলাে দর্শন করতে শুরু করেন । যে সকল স্থানে তিনি পরিভ্রমণ করতেন সেখানকার জনসাধারণের সঙ্গে তিনি ‘ধম্ম’ সম্পর্কে আলােচনা করতেন । এইসব স্থানে তিনি অনেক স্তম্ভ ও স্তূপ নির্মাণ করেন । ধর্মপ্রচারের কাজে সহায়তা করার জন্য তিনি রজুক, যুত , মহামাত্র প্রভৃতি রাজকর্মচারীদের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণের নির্দেশ দেন ।জনসাধারণের মধ্যে ধর্মভাব জাগ্রত করে তোলার জন্য অশােক ধর্মমহামাত্রনামে একদল নতুন রাজকর্মচারী নিযুক্ত করেন । ধর্মমহামাত্রগণ রাজ্যের সর্বত্র জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে প্রজাদের মধ্যে নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা দিতেন । কারাগারে বন্দীদের মধ্যে ধর্মপ্রচারের দায়িত্ব তাদের গ্রহণ করতে হত । নানারূপ অলৌকিক দৃশ্য দেখিতে অশােক জনসাধারণকে ধর্মপথে আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন । 
 
পর্বতগাত্রে প্রস্তরখণ্ডে , স্তম্ভগাত্রে সহজবােধ্য ভাষায় ধম্মের মূল কথাগুলাে  উৎকীর্ণ করে তিনি জনসাধারণের মধ্যে ধর্মভাব জাগ্রত করে তুলতে চেষ্টা করেন । তাছাড়া বৌদ্ধধর্মের বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য তিনি সম্ভবত ২৫১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পাটলিপুত্র নগরে কতক বৌদ্ধধর্ম সভা আহ্বান করেন । এই বৌদ্ধ ধর্মসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি কাশ্মীর, গান্ধব নেপাল মহারাষ্ট্র প্রভৃতি স্থানে মজ্জন্তিক , মজ্জিম মহাধর্ম , রক্ষিত প্রভৃতি বৌদ্ধ ভিক্ষুগণকে প্রেরণ করেন । 
 

( ৬ ) সাম্রাজ্যের বাইরে ধর্মপ্রচার : ত্রয়ােদশ শিলালিপি থেকে জানা যায় যে ধৰ্ম্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে অশােক তার রাজ্যসীমার বাইরে দক্ষিণে চোল , পাণ্ড্য, কেরলপুত্র , সতিয়পুত্র প্রভৃতি রাজ্যে ধর্ম প্রচারকদের প্রেরণ করেন । ভারতের বাইরের বিভিন্ন দেশে ধর্মপ্রচারের ব্যাপারেও অশােক খুব উৎসাহের পরিচয় দেন । ‘মহাবংশ’ নামক বৌদ্ধধর্মগ্রন্থ থেকে জানা যায় যে অশােক তার দূতগণকে ধর্মপ্রচারের জন্য বিভিন্ন তামিল রাজ্যে প্রেরণ করেন এবং ভ্রাতা অথবা পুত্র মহেন্দ্র এবং কন্যা সঙ্মিত্রাকে তিনি সিংহলে প্রেরণ করেছিলেন । মহারক্ষিত নামে একজন প্রচারক সিরিয়া মিশর , সাইরিন , ম্যাসিডােনিয়া , ইপিরাস প্রভৃতি গ্রীক দেশগুলােতে প্রেরিত হয়েছিলেন । সুবর্ণভূমি অর্থাৎ ব্ৰত্মদেশ ( বর্তমান মায়ানমার ) ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে তিনি সােন ও উত্তর নামে দুজন প্রচারককে পাঠিয়ে ছিলেন । 


( ৭ ) অশােকের পররাষ্ট্রনীতি : সম্রাট অশােক পররাষ্ট্রনীতিতেও ধর্মীয় ও নৈতিক আদর্শ গ্রহণ করে যুদ্ধের দ্বারা পররাজ্য গ্রাস করার নীতি পরিত্যাগ করেন । কলিঙ্গ যুদ্ধের পরেই তিনি ভেরীঘােষের পরিবর্তে ধর্মঘােষের নীতি গ্রহণ করেন । ত্রয়ােদশ শিলালিপিতে তিনি তার পুত্র ও পৌত্রগণকেও যুদ্ধজয়ের দ্বারা রাজ্যবিস্তার থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন । এই শিলালিপিতেই তিনি অবিজিত প্রত্যন্ত দেশগুলাের অধিবাসীদের নির্ভয়ে জীবন যাপন ধর্মাচরণের আশ্বাস দেন । অশােক এই সব রাজ্যের অধিবাসীদের ঐহিক এবং পারলৌকিক সুখও কামনা করেন । 
 
( ৮ ) অশােকের জনকল্যাণমূলক কার্যাবলী পৃথিবীর যেসকল নরপতি প্রজার মঙ্গল সাধনের উদ্দেশ্যে নিজের সময় ও সামর্থ্য অকাতরে ব্যয় করেছেন অশােক তাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ । প্রকৃতপক্ষে অশােক রাজকীয় কর্তব্যের নতুন আদর্শ স্থাপন করেন । প্রজাদের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক মঙ্গল সাধনই তার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল । সন্তানদের মঙ্গলের জন্য পিতা যেমন সর্বদাই ব্যাকুল থাকেন সেইরকম অশােকও তার প্রজাদের দৈনন্দিন জীবনের সুখ- সাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা করেন । তাদের নৈতিক চরিত্রের উন্নতির জন্যও তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেন । প্রজাদের  বােধগম্য ভাষায় সহজে পালনযােগ্য ধর্মের বাণী ও অনুশাসন প্রচার করেন পরলােকে গিয়েও প্রজারা যাতে সুখে শান্তিতে বাস করতে পারে তাও তিনি কামনা করেন । রাজকর্মচারীদের অত্যাচার দূর করতেও তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেন । প্রজাদের সুখ - সুবিধার জন্য তিনি কূপ খনন ও বৃক্ষ রােপন করেন এবং জলছত্র ও চিকিৎসালয় স্থাপন করেন । ঔষধের জন্য প্রয়ােজনীয় লতাগুল্ম তিনি রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে রােপন করেন । প্রজারা যাতে সুখে সাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করে ধর্মের পথ অনুসরণ করতে পারে সেজন্য তিনি এই ব্যবস্থা করেছিলেন । ব্যক্তিগতভাবে অশােক অহিংসানীতি পুরােপুরি ভাবে গ্রহণ করেন এবং প্রজাদের এই নীতি গ্রহণে অনুপ্রাণীত করেন । বিভিন্ন লিপি ও অনুশাসনে প্রজাদের তিনি অত্যন্ত সহজ ও সরল ধর্মোপদেশ দেন । ‘সদ্ভাববে জীবন যাপন ও আত্মােন্নতির চেষ্টা করবে , মিথ্যাকথা ও অসৎ বাক্য বলবেনা । ক্রীতদাস ও ভৃত্যদের প্রতি ভাল ব্যবহার করবে ; পিতা - মাতা ও গুরুজনদের আদেশ পালন করবে ; অবিচলিত ভাবে নিজের কর্তব্য করবে ।’  বন্ধু, পরিচিত ব্যক্তি জ্ঞাতি , ব্রাত্মণ , শ্ৰমণদের দান করতেও তিনি উৎসাহিত করতেন । 


( ৯ ) অশােকের রাজধর্ম : অশােকের রাজধমও ছিল খুব উন্নতমানের । রাজারূপে অশােক প্রজাদের হিতসাধন এবং তার প্রচারিত ‘ধম্ম’ প্রচারে শিক্ষা দিয়ে তাদের ধর্মবৃদ্ধিতে সহায়তা ও প্রেরণা দান করা অবশ্য কর্তব্য বলে মনে করতেন । কর্মচারীদের ওপর নির্ভর না করে অশােক নিজেই রাজকার্য পরিচালনার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকতেন বলে ঘােষণা করেন । প্রজাদের জন্য কল্যাণমূলক কাজকে তিনি নিজের কর্তব্য বলে মনে করতেন । সুতরাং তিনি সর্বদা এই ধর্ম পরিশােধের চেষ্টা করতেন । “ তােমাদের রাজা হয়ে আমি তােমাদের নিকট ঋণী এবং তােমাদের সর্বাঙ্গীন মঙ্গলের জন্য পবিত্র কর্তব্য পালন করে সেই ঋণমুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছি ।”


 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন